স্টাফ রিপোর্টার: ‘২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতেই হবে, এর কোনো ব্যতিক্রম মানা হবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য একটাই, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে হবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনের সময় ঠিক করেছেন। এর কোনো ব্যতিক্রম করা চলবে না। এদিকে মির্জা আব্বাস বলেছেন, মিটফোর্ড হত্যা মামলার আসামির সঙ্গে এনসিপি নেতাদের ছবি আছে। গতকাল সোমবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, অপপ্রচার এবং মিটফোর্ড এলাকায় প্রকাশ্যে লাল চাঁদ সোহাগকে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এই কর্মসূচির আয়োজন করে ঢাক মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। ফকিরাপুল থেকে কাকরাইলের নাইটেঙ্গল মোড় পর্যন্ত মহানগর বিএনপির বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন। পরে মিছিলটি বিজয়নগর দিয়ে প্রেস ক্লাবে গিয়ে শেষ হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের সময় নির্ধারণের পর থেকে ওদের (ষড়যন্ত্রকারী) মাথা বিগড়ে গেছে। লন্ডনে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেই সময়টাতে নির্বাচন চাই। আমরা ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। জনগণের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা ও চাকরি সংস্থান করতে চাই। আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুন এক বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চাই। নিজ দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, তারা (ষড়যন্ত্রকারী) চেষ্টা করছে আমাদের উত্তেজিত করে তাদের পাতা ফাঁদে পা দেয়ার জন্য। সাবধান আমরা কারও পাতানো ফাঁদে পা দেব না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা আজকে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বলে তারা গণতন্ত্রের শত্রু। যারা দেশের বিরুদ্ধে বলে তারা গণতন্ত্রের শত্রু। তারা এই দেশের মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলে। গণতন্ত্রের প্রশ্নে আমাদের কোনো আপস নেই। আমি ধিক্কার জানাচ্ছি ওইসব তথাকথিত রাজনৈতিক নেতাকে, যারা তারেক রহমান সম্পর্কে অশ্লীল-অশ্রাব্য কথা বলেছেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যে ইস্পাত কঠিন দৃঢ় ঐক্য নিয়ে ১৫ বছর আমরা লাঞ্ছিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত হয়েছি সেই ঐক্য নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব। আমি সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানাব, আসুন গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে একযোগে সামনের দিকে এগিয়ে যাই।’
মিটফোর্ড এলাকায় প্রকাশ্যে লাল চাঁদ সোহাগকে মাথা থেঁতলে হত্যার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, এই খুনের ঘটনার পুঙ্খানুপঙ্খু তদন্ত হতে হবে। যারা দায়ী তাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এটা (হত্যাকা-) যারা করেছে তারা বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য করেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ওদের পরিকল্পনাটা অত্যন্ত ভয়াবহ। বাংলাদেশে আবার একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চায়। বিভাজনের সৃষ্টি করে, বাংলাদেশকে আবার একটা জায়গায় নিতে চায়, যেখানে গণতন্ত্র তিরোহিত হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা একসঙ্গে হয়ে ফ্যাসিস্টদের বিতাড়িত করেছি, আবার ফ্যাসিস্টদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য নয়। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, কোনোদিন যেন ফ্যাসিজম এ দেশে চালু হতে না পারে তার ব্যবস্থা আমরা করব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, মিটফোর্ডের সামনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। যে ছেলেটাকে হত্যা করা হয়েছে, সেই ছেলেটা বিএনপি করত। তার পরিবার-পরিজন বিএনপির সমর্থক। এই মর্মান্তিক ঘটনা সহ্য করার মতো নয়। এই ঘটনা থেকে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে কারা? এটা আপনাদের ভাবতে হবে। এই ঘটনাটি যখন ঘটে, ক্যামেরাম্যান ছবি তুলেছে, কোনো নড়াচড়া নেই, কোনো কাঁপুনি নেই, খেয়াল করে দেখবেন, ভিডিওটি মনে হয় একেবারে তৈরি করা। অর্থাৎ এই ঘটনাটি ঘটবে, ভিডিও করবে-দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবে, জাতির সামনে বিএনপিকে মাথা নত করতে বাধ্য করবে। এমন চিন্তাধারায় করা হয়েছিল। অথচ এই ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় যে ধরা পড়েছে, মাহিন (মাহমুদুল হাসান মাহিন) নামে একটা ছেলে, এই ছেলের সঙ্গে এনসিপির নেতাদের ছবি আছে। আমি দেখাতে পারি। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, এই ছেলের সঙ্গে ওদের ছবি আছে। অথচ বিএনপির ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বিএনপিকে আওয়ামী লীগের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা আব্বাস।
তিনি বলেন, আর একটি দল, লম্বা লম্বা কথা বলা, সুকৌশল ও কারচুপি, সুকৌশলে চাঁদা, তারা বলেন, হাদিয়া, এই হাদিয়া নেওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। গায়ের জোরে কথা বলেন, নিজের পায়ে জোর নেই। এরশাদের সময় এইচএম এরশাদের কাঁধে ভর করেন, আওয়ামী লীগের সময় আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করেন, বিএনপির সময় বিএনপির কাঁধে ভর করেন। বিএনপি এখন একমাত্র মাথাব্যথা, বিএনপিকে যদি শেষ করে দেওয়া যায়, তাহলে তারা রাজত্ব করতে পারবেন।
ওদিকে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিকাল ৩টা থেকে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী খ- খ- মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে জড়ো হতে শুরু করেন। এ সময় তারা জামায়াত-শিবিরের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাওসহ বিভিন্ন সেøাগানে সেøাগানে নয়াপল্টনমুখর করে তোলেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনুর সভাপতিত্বে এবং দক্ষিণের সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় মিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, যুবদলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্নাসহ কেন্দ্রীয় বিএনপির সিনিয়র নেতারা এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।