স্টাফ রিপোর্টার:দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচন প্রসঙ্গটি আবারও আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন, যিনি বর্তমানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, সম্প্রতি রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক সভায় নির্বাচনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেছেন। তাঁর বক্তব্যের মূল সারমর্ম হলো, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোন রাজনৈতিক দল অংশ নেবে বা নেবে না—এটি সরকারের দায়িত্বের বিষয় নয়, বরং নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার বিষয়।
নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ সরকারের দায়িত্ব নয়
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন স্পষ্ট করে বলেন, “নির্বাচনে কোন দল অংশগ্রহণ করবে আর কোন দল করবে না, তা দেখার দায়িত্ব সরকারের নয়।” তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের মূল অঙ্গীকার হলো একটি ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন আয়োজন করা। অর্থাৎ, সরকার নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে যেখানে প্রতিটি ভোটার ও দল স্বাধীনভাবে অংশ নিতে পারবে। তবে দলগুলোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার হস্তক্ষেপ করবে না। নির্বাচন কমিশন এই বিষয়টি দেখবে এবং রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মতামত ও কৌশল নির্ধারণ করবে।
ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন: সবার আশা ও সরকারের অঙ্গীকার
উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “বাংলাদেশে একটি ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার সমাজের সূচনা হবে একটি ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে।” তিনি এও যোগ করেন, সরকার বদ্ধপরিকর নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্ব হস্তান্তর নিশ্চিত করতে চায়। অর্থাৎ, সরকারের লক্ষ্য একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা, যাতে জনগণ তাদের ইচ্ছামতো ভোট দিতে পারে এবং পরবর্তী সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে।
নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় সরকারের ভূমিকা
সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনকে যেভাবে সাহায্য প্রয়োজন হবে সেভাবেই সরকার সহায়তা করবে।” এর মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর হবে। এটি ভোটারদের আস্থা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে।
ভোট না দেওয়ার কারণে তরুণদের উদ্বেগ ও সমাধানের প্রয়োজনীয়তা
উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, অনেক তরুণের বয়স ত্রিশ ছাড়িয়ে গেলেও তারা এখনো ভোট দিতে পারেননি। অনেকেই ভোট কেন্দ্রের অবস্থান বা ভোট প্রদানের প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত নন। এটি একটি দুঃখজনক বিষয়, কারণ দেশের বৃহৎ অংশের তরুণ সমাজ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আপনি যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারকে বাইরে রাখেন, তবে দেশের পরিচালনা ব্যবস্থা সেইভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না।” তিনি বলেন, শুধু বর্তমান সরকারের দোষারোপ করলেই চলবে না, কারণ এ বিষয়ে সবাই মিলে প্রতিক্রিয়া ও আলোচনা চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তরুণ ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।
সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতা: নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে অপরিহার্য
সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতা নিতে হবে বলে উপদেষ্টা জোর দেন। সংবাদমাধ্যম নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে, ভোটারদের সচেতন করতে এবং অবাধ ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “সংবাদমাধ্যম কর্মীদের সহায়তা ছাড়া নির্বাচন কমিশনের কাজ সম্পূর্ণ করা কঠিন।”
বিশ্লেষণ: বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে নির্বাচন ও সরকারের ভূমিকা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচন একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সরকারের হাতে নেই। এটি একটি স্বতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসিত প্রক্রিয়া হওয়া উচিত, যাতে ভোটারদের স্বতন্ত্র অধিকার সুরক্ষিত থাকে।
তবে তরুণ ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আজকের তরুণ সমাজ দেশের ভবিষ্যত, তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি হলে দেশের গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তাই নির্বাচন কমিশন, সরকার এবং সমাজের সকল স্তরের যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন এই তরুণদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য।
সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা অপরিহার্য, কারণ তারা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে। সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে ভোটাররা জানতে পারে কোথায় ও কিভাবে ভোট দিতে হবে, কোন দল কি অবস্থান নিয়েছে ইত্যাদি বিষয়। এই তথ্যভিত্তিক পরিবেশ ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ায় এবং দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে।
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দল নির্ধারণ সরকারের দায়িত্ব না হলেও, সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে সম্মিলিতভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমুখী করে তুলতে হবে। তরুণ ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ানো, সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতা নিশ্চিত করা এবং একটি ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন আয়োজন করা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মজবুত ভিত্তি স্থাপনে সহায়ক হবে।
সূত্র: সমসাময়িক রাজনৈতিক আলোচনা, এম সাখাওয়াত হোসেনের প্রকাশিত বক্তব্য, ১১ অক্টোবর ২০২৫, কারওয়ান বাজার, ঢাকা।