বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বিজিবি সোর্স তারিককে কুপিয়ে হত্যা

জীবননগরে চোরাকারবারিদের সাথে বিরোধ : অজ্ঞাত দুর্বৃত্তের নৃসংশতা

সালাউদ্দীন কাজল: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর গয়েশপুর সীমান্তে তারিকুল ইসলাম তারিক (৪০) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত। সোমবার দিনগত গভীর রাতে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যান তিনি। সোমবার রাত দেড়টার দিকে ভারত সীমান্তের জামতলায় হামলার শিকার হলেও তারিক দৌড়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে উপজেলার গয়েশপুর সীমান্তের দোয়াড় মাঠে এসে পড়ে যান। বিজিবির টহল দলের সদস্যরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পরিবারের সদস্যদের খবর দেয়। পরিবারের সদস্যরা রাতেই তারিককে উদ্ধার করে জীবননগর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়। সেখান থেকে তাকে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণ পরই মারা যান।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের গয়েশপুর বড়পুকুরপাড়ার রবগুল হোসেনের ছেলে তারিকুল ইসলাম তারিক এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিজিবির সোর্স হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। যে কারণে এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার বৈরী সম্পর্ক ছিলো। সোমবার দিনগত রাত ১টার দিকে অজ্ঞাত কয়েকজন ব্যক্তি তারিক হোসেনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর কুলোপাড়া গ্রামের লোকজন তারিক হোসেনের বাড়িতে খবর পাঠায় কে বা কারা তারিক হোসেনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গয়েশপুর কুলোপাড়া সীমান্তের ৬৮নং মেইন পিলারের কাছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ফেলে রেখে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, সম্প্রতি বিজিবি সদস্যরা জীবননগরের সীমান্ত এলাকায় কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে কয়েক কোটি টাকার স্বর্ণসহ মাদকদ্রব্য আটক করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত স্বর্ণ চোরাকারবারীদের ধারণা তারিক হোসেন বিজিবি সদস্যদের কাছে তথ্য দিয়ে এসব স্বর্ণ এবং মাদকদ্রব্য ধরিয়ে দিয়েছে। এসব ঘটনার পর থেকেই তারিক হোসেন স্বর্ণ ও মাদক চোরাকারবারীদের টার্গেটে পরিণত হয়। এলাকাবাসীর ধারণা, জীবননগরের তালিকাভুক্ত ও চিহ্নিত স্বর্ণ চোরাকারবারীরায় তারিক হোসেনকে কৌশলে হত্যা করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী আরও জানায়, ভারতে স্বর্ণ পাচারকারীরা নির্বিঘেœ যাতে স্বর্ণ পাচার করতে পারে এজন্য তারা তাদের পথের কাটা সরিয়ে ফেলেছে।

এলাকাবাসীর দাবি, জীবননগরের চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত স্বর্ণ চোরাকারবারীদের মুঠোফোন ট্যাকিং, নিহত তারিক হোসেনের মুঠোফোন ট্যাকিং এবং ঘটনার রাতে তারিক হোসেন কার কার সাথে ঘোরাফেরা করেছে এবং কারা রাতে তার বাড়ি থেকে ডেকে এনেছিলো এসূত্র ধরে তদন্ত করলেই হত্যাকারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে এবং হত্যার প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে।

সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইশাবুল ইসলাম মিল্টন জানান, নিহত তারিক হোসেন বিজিবির সোর্স হিসেবে কাজ করতো। এ কারণে চোরাকারবারীদের মধ্যে তারিক হোসেনের প্রতি ক্ষোভ ছিলো। এরই জেরে তাকে কুপিয়ে হত্যা করতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

নিহত তারিকের পিতা রবগুল হোসেন বলেন, আমার ছেলেকে রাত সাড়ে ১২টার দিকে কারা যেন ডেকে নিয়ে যায়। পরবর্তী রাত দেড়টার দিকে তাকে দোয়াল মাঠ থেকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শুরুর আগেই আমার ছেলে তারিক মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়েন।

জীবননগর থানার ওসি আব্দুল খালেক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তারিক মূলত ভারত সীমান্তের ভেতরে জামতলা নামক স্থানে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়ে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম হন এবং সে দৌড়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশের অভ্যন্তর গয়েশপুর দোয়াল মাঠে একটি কলাবাগানের ভেতরে পড়ে যায়।

বিজিবির মহেশপুর-৫৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. শাহীন আজাদ বলেন, বিজিবির কাছে চোরাকারবারীদের ব্যাপারে অনেকেই তথ্য দেন। নিহত তারিক হোসেনও হয়তোবা তথ্য দিতেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, তথ্য সরবরাহকারীরাও চোরাকারবারীদের সাথে জড়িত থাকে। নিহত তারিক হোসেনের ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, চোরাকারবারীদের নিজেদের দু’গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

Comments (0)
Add Comment