বিএনপি-আ.লীগের সংঘর্ষে কৃষক নিহত : আহত ১০

ঝিনাইদহের পল্লী দিঘীরপাড় গ্রামে দীর্ঘদিনের বিরোধের জের

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: নতুন দলে যোগদান ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার দিঘীরপাড় গ্রামে মোশাররফ হোসেন (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে বাড়িতে ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে হত্যা করে। নিহত মোশাররফ হোসেন ওই গ্রামের শমসের মোল্লার ছেলে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন একই পরিবারের ছয়জনসহ ১০ জন। আহতরা হলেন- আনিছুর রহমান, মতিয়ার রহমান, মিজানুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, জাহাঙ্গীর হোসেন ও নাহিদ। তাদের উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, সামাজিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দিঘিরপাড় গ্রামের বিএনপি নেতা আমজাদ বিশ্বাসের সাথে একই গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আলিম উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিলো। গত রোববার রাতে আলিম উদ্দিনের লোকজন আমজাদ বিশ্বাসের সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছিলো। এরই জের ধরে বুধবার সকালে উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মোশাররফ হোসেন নামের একজনকে মৃত ঘোষণা করে। আহতদের ঝিনাইদহ সদর, মাগুরা ও ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আহম্মদ আলী জানান, দিঘীরপাড় গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ নেতা শহীদ শিকদার ও আবু সাঈদের দুটি সামাজিক দল ছিলো। গ্রাম পর্যায়ে তারা আলিমুদ্দীন ও আহম্মদ আলী গ্রুপে বিভক্ত। হাসিনা সরকারের পতনের পর উভয় গ্রুপের সামাজিক দলের সদস্যরা যুবদল নেতা শাহাবুল ও বিএনপি নেতা জাহিদ বিশ্বাসের দলে ভিড়ে যায় এবং সামাজিক বিরোধে লিপ্ত হয়। ওই ঘটনা জেরে আজ মারামারির ঘটনা ঘটেছে। সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল কুদ্দুস জানান, পুরোনো বিরোধের জের ধরে গত ২৮ এপ্রিল এক দফা মারামারি হয় এবং রেজওয়ান বিশ্বাসের সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। ঘটনার দিন আলিমুদ্দীনের সমর্থকরা পিটিয়ে ও কুপিয়ে নারীসহ ৫ জনকে আহত করে। স্থানীয়রা জানান, বুধবার দুপুরে এলাকায় পুলিশ আসার খবরে আলিমুদ্দীনের সমর্থকরা নিরাপদ স্থানে চলে যায়। কিন্তু সুযোগ বুঝে আহাম্মদ আলীর সমর্থকরা প্রতিপক্ষ আলিমুদ্ধীন গ্রুপের সদস্য মোশাররফ হোসেন মোল্লার বাড়িতে ঢুকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ৭ জনকে গুরুতর জখম করে। এর মধ্যে মোশাররফ হোসেন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে মারা যান। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদ জানান, ফুরসন্ধি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শিকদার ও সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাড. আব্দুল মালেক মিনা দুই গ্রুপের সামাজিক বিরোধ চলে আসছিলো। যে মারা গেছেন সে আমাদের দলীয় একজন কর্মী। আসামীরা যেই হোক না কেনো তাদেরকে আইনের মাধ্যমে বিচার দাবি করেন তিনি। ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া বলেন, সামাজিক দ্বন্দের কারণে এই হত্যাকা- ঘটেছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হত্যাকা-ের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সামাজিক আধিপত্য নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে মোশারফ হোসেন নামে একজন মারা গেছে। আরেক জনের অবস্থা আশংকাজনক। আমরা এলাকায় আছি, পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে।