ব্র্যাকের এক সেবিকার মাধ্যমে নবজাতক বিক্রি করলেন প্রসূতি!

শাহাদাৎ লাভলু: আলমডাঙ্গার নতিডাঙ্গা আবাসনের এক প্রসূতির সদ্য ভুমিষ্ট নবজাতক বিক্রির ঘটনা ঘটেছে। ব্র্যাকের স্থানীয় এক স্বাস্থ্য সেবিকার মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী গোয়ালবাড়িয়া গ্রামের এক দম্পতির কাছে নবজাতককে বিক্রি করা হয়। পুত্র সন্তানের প্রতি স্বামীর চাহিদা না থাকায় ওই নবজাতককে বিক্রি করেন প্রসূতি। তবে সন্তান বিক্রির বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন স্বামী খাইরুল ইসলাম। গতকাল বুধবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পুত্রসন্তান প্রসব করেন খাইরুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী আবাসনের বাসিন্দা মিনারা খাতুন। এদিকে, এর আগেও একটি সন্তান বিক্রি এবং একটি সন্তানকে হত্যা করে নদীর পাশে পুতে ফেলারও অভিযোগ রয়েছে এই দম্পতির বিরুদ্ধে। ফলে খাইরুল ইসলাম ও মিনারা খাতুন দম্পতির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন আবাসন পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বারাদি ইউনিয়নের নতিডাঙ্গা আবাসনের ৪ নম্বর শেডের ৫ নম্বর কক্ষে বসবাস করেন খাইরুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী মিনারা খাতুন (৩২)। প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে নতিডাঙ্গা গ্রামেই থাকেন খাইরুল ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে প্রসব বেদনা ওঠে গর্ভবতী মিনারা খাতুনের। স্বামীর সাথে মোবাইলফোনে কথা বলে আলমডাঙ্গা উপজেলা ব্র্যাক সংস্থার সেবিকা হেনা খাতুন ও আবাসনের বাসিন্দা বারেক আলীর স্ত্রী আমেলা খাতুনের সাথে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হন মিনারা। সকাল ৮টার দিকে পুত্রসন্তান জন্ম দেন তিনি। সাথে সাথেই ব্র্যাকের সেবিকা হেনা খাতুনের হাতে তুলে দেন মিনারা খাতুন।

প্রসূতি মিনারা খাতুন বলেন, ৮ মাস আগে আমি সন্তানের মা হবো শুনেই আমার স্বামী চলে গেছে। এখানে (আবাসন) আর আসে না। মাঝে মধ্যে শুধু মোবাইলফোনে কথা হয়। কন্যাসন্তান জন্ম নিলেই আমার স্বামী মেনে নেবে। আমার ছেলে হওয়ার কারণে দিয়ে দিয়েছি। নবজাতকের পিতা খাইরুল ইসলাম বলেন, আমার দুই সংসারে প্রথম স্ত্রীর ৩ পুত্র সন্তান আছে। দ্বিতীয় স্ত্রীরও এক সন্তান আছে। আমি আর কোনো পুত্রসন্তান নিতে ইচ্ছুক নই। তবে, আমার সন্তানকে বিক্রি করা হয়েছে কিনা আমি জানি না।

আলমডাঙ্গা উপজেলা ব্র্যাক সংস্থার সেবিকা হেনা খাতুন বলেন, মোবাইল ফোনে আমাকে ডেকে নেয়ার কারণে তাদের সাথে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গিয়েছি। পুত্রসন্তান হওয়ার পর মিনারা তার সন্তানকে অন্য কারো কাছে দিয়ে দিতে বলে। পরে আমি আমাদের পাশ্বর্বতী গোয়ালবাড়িয়া গ্রামের মাঝেরপাড়ার মনোয়ার হোসেন স্ত্রী বুলবুলি খাতুনের কাছে দিয়ে দিই। সন্তান যদি সুস্থ থাকে তাহলে তারা এই সন্তান নেবে। না হলে আর নেবে না। এখনও পর্যন্ত সন্তান অসুস্থ রয়েছে।

এ বিষয়ে আবাসন পরিচালনা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দার খা বলেন, বছর দুয়েক আগেও পুত্র সন্তান প্রসব করেন খাইরুল ইসলামের স্ত্রী মিনারা খাতুন। সেই সন্তান তারা মেরে ফেলে নদীর পাশে পুতে রাখে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সেখান থেকে মরদেহ তুলে গ্রামের কবরস্থানে নিয়ে একাই দাফন করেন খাইরুল ইসলাম। আমরা এই পরিবারটির সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করছি।

ক্যাশিয়ার কাসেম আলী বলেন, এই পরিবারটি চলাফেরা খুব নেক্কারজনক তাই আমি এই পরিবারটি জন্য প্রশাসনের কাছে শাস্তি কামনা করছি। স্থানীয়দের অনেকেই বলেছেন, মিনারা খাতুনের কার্যকলাপ খুবই খারাপ। ৩ বছর আগে তার প্রথম সন্তান ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে কুষ্টিয়া এলাকায় বিক্রয় করে। গত ২ বছর আগে তার এক সন্তানকে মেরে ফেলে পুতে রাখে। সর্বশেষ গতকাল বুধবার সকালে তার আরেক সন্তানকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেছে। আবাসনের বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে তাদের শাস্তি দাবি করেন তারা।

Comments (0)
Add Comment