ভর্তিযুদ্ধে কৃতি শিক্ষার্থীদের বাড়িতে চুয়াডাঙ্গার ওসি মহসীন

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের শীর্ষ স্থানীয় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিযুদ্ধে চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীরা এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বুয়েটে চুয়াডাঙ্গার ৩ জন, সমন্বিত গুচ্ছ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ জন ও বুটেক্সে ৪ জন মেধাতালিকায় ভর্তি যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এছাড়াও সুবিধাজনক অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছেন ৫ জন। এসব শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহিত করতেই মিষ্টি নিয়ে তাদের বাড়ি বাড়ি হাজির হন চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন। এ সময় তিনি দেশসেরা শিক্ষার্থীদের হাতে মিষ্টির প্যাকেট তুলে দেন এবং ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এই ব্যতিক্রম উদ্যোগ ঘিরে প্রশংসায় ভাসছেন ওসি মোহাম্মদ মহসীন।
বুয়েটে ভর্তির যোগ্যতা অর্জনকারী নাফিউল হাসান বলেন, সোমবার দুপুরে সদর থানার ওসি স্যার আমাদের বাড়িতে মিষ্টির প্যাকেট হাতে আসেন। পরে আমাকেসহ আমার পরিবারকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় আমাকে অনুপ্রেরণা দেন তিনি। কিশোর গ্যাং ও মাদকের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন তিনি। ওসি স্যারের ব্যতিক্রম উদ্যোগকে আমার ও আমার পরিবারের সত্যিই অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। নাফিউল হাসান চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুলচারা গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও হোসনে আরা দম্পতির সন্তান। তার বাবা একজন ব্যবসায়ী। বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ২২১তম স্থানে রয়েছেন তিনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় হয়েছিলেন ২০০তম। প্রকৌশল গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় হয়েছিলেন ৩৫৮তম।
বুয়েটে ভর্তির যোগ্যতা অর্জনকারী অপর শিক্ষার্থী আকিব শিহাব বলেন, আমি কখনো ভাবতেই পারিনি সদর থানার ওসি আমাকে শুভেচ্ছা জানাতে বাড়িতে আসবেন। চুয়াডাঙ্গায় এই প্রথম কোনো ওসির ব্যতিক্রম উদ্যোগ আমি দেখলাম। তিনি বাড়িতে আসার পর বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন ও মিষ্টির প্যাকেট হাতে তুলে দেন। পরে আমাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় আমার যে অনুভূতি হয়েছে তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তিনি আসলেই প্রশংসার দাবিদার। আকিব শিহাব চুয়াডাঙ্গা ভি জে সরকারি উচ্চ বিদ্যলয় থেকে এসএসসি ও চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। তিনি চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মালোপাড়ার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ ও আসমা আখতারের সন্তান। তার পিতা মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ একজন সরকারি চাকরিজীবী। আকিব শিহাব বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় ৫৮৩ তম স্থান অধিকার করেছেন। তিনি বুটেক্সে ৭২তম, সমন্বিত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে ৮৮ তম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় হয়েছিলেন ১১০১তম।
এছাড়াও চুয়াডাঙ্গা থেকে চুয়েট, কুয়েট ও রুয়েট, মেডিকেল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশসেরা উচ্চ প্রতিষ্ঠানে ভর্তির অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের বাসায় গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং মিষ্টির প্যাকেট হাতে তুলে দেন ওসি মোহাম্মদ মহসিন।
এদিকে এই ছবি ওসি মোহাম্মদ মহসিন ও শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করলে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। ওসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সবাই ইতিবাচক মন্তব্য করতে থাকেন।
কামরুজ্জামান মিলু নামে এক ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন, ‘এটি একজনই পারে। স্যালুট স্যার আপনাকে।’ সোহেল কাজি নামের আরও একজন লিখেছেন, ‘মহসিন স্যারের এগুলো নতুন না, অনেক আগে থেকেই এমনটা চলে আসছে হয়তো। এখন জায়গাটা ভিন্ন, কিন্তু অভ্যাস একরকমই আছে সবসময়ই মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন। যাই হোক অনেক অনেক শুভকামনা রইলো আপনার জন্য স্যার।’
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, মূলত শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতেই আমাদের এই উদ্যোগ। কিশোর গ্যাং এর বিপরীতে শক্তিশালী মডেল হতে পারে মেধাবী এসব শিক্ষার্থীরা। তাদের দেখে অন্যরাও উদ্বুদ্ধ হবে। তাই দেশসেরা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুযোগপ্রাপ্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমরা শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

 

Comments (0)
Add Comment