ভারতে শনাক্ত আব্দুস সালামকে চুয়াডাঙ্গায় পর্যবেক্ষণে রেখে পর্যালোচনা করা হচ্ছে আক্রান্তের ধরণ

ঝিনাইদহের করোনা আক্রান্ত রোগীর চুয়াডাঙ্গায় মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় আরও একজন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জহুরা বেগম নামের ৭০ বছর বয়সী নারী মারা যান। তিনি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার পীরগাছা গ্রামের মৃত করিম ম-লের স্ত্রী। গতকাল পাওয়া চুয়াডাঙ্গার ২১ জনের রিপোর্টে দুজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তারমধ্যে একজন জহুরা বেগম, অপরজন আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জের জেহালা বাজারের বাসিন্দা। এদিকে, ভারতফেরত সিনেমাহলপাড়ার আব্দুস সালাম আইসোলেশন ইউনিটের রেডজোনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বুধবার করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তাকে রেডজোনে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার ঠান্ডা, শ্বাসকষ্ট সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৭০ বছর বয়সী জহুরা খাতুন। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ফাতেহ আকরাম বলেন, ২৮ এপ্রিল দুপুরে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন জোহরা। বৃহস্পতিবার সকালে জিন-এক্সপার্ট মেশিনে নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা পজিটিভ আসে। তিনি আরও বলেন, এর কয়েক ঘণ্টা পর করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মরদেহটি পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার দাফন কাজ সম্পন্ন করা হবে। এ নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১ জন। চুয়াডাঙ্গার বাইরে চুয়াডাঙ্গারই আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫৬ জনে। তবে বেসরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা আরও ৩ জন বেশি।
এদিকে সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার জেলায় আরও দুজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১ হাজার ৮৬৩ জনে। মোট সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৭১৩ জন। গতকাল আরও ৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
অপরদিকে, ভারত থেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে দেশে ফেরা চুয়াডাঙ্গার সিনেমাহলপাড়ার আব্দুস সালামকে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটের রেডজোনে রাখা হয়েছে। গত বুধবার পাওয়া রিপোর্টে তার শরীরে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তাকে রেডজোনে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এর আগে গত রোববার যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরে চুয়াডাঙ্গা শহরের সিনেমাহল পাড়ার নিজবাড়িতে ওঠেন তিনি। পরিবারের সদস্যদের সাথে একদিন অবস্থানও করেন। পরে সোমবার রাতে বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয় শহর জুড়ে। পরে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে পুলিশ আব্দুস সালামকে তার বাড়ি থেকে নিয়ে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করে।
জানাগেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শহরের সিনেমাহল পাড়ার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে আব্দুস সালাম গত ১ এপ্রিল ব্যবসায়ীক কাজে ভারতে গিয়েছিলেন। টানা ২২ দিন ভারতের দিল্লি, পাঞ্জাব ও কলকাতাসহ কয়েকটি রাজ্য ভ্রমণ করেন। এরইমধ্যে গত ১৯ এপ্রিল রাতে শরীরে হালকা ব্যথা অনুভব করেন তিনি। একদিন পর গলাব্যথা ও কাশি শুরু হয়। পরদিন আব্দুস সালাম কোলকাতার পিসিআর ল্যাবে নমুনা দেন। নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হন আব্দুস সালাম। বিষয়টি গোপন করে তিনি পরদিন শনাক্তরত অবস্থায় পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের বেনাপোলে প্রবেশ করেন। সেখানে নাম পরিচয় গোপন করে কোয়ারেন্টাইন না মেনে চলে আসেন নিজ বাড়ী চুয়াডাঙ্গা সিনেমাহল পাড়ায়।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সাবেক ফুটবলার ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম মোবাইলফোনে জানিয়েছিলেন, ব্যবসায়ীক কাজে তিনি প্রায় সময়ই ভারত ভ্রমণ করেন। গত নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ৪ বার ভারতে গেছেন তিনি। তবে এর আগে নমুনা দিলেও করোনা শনাক্ত হননি। এবার নমুনা দিয়ে আক্রান্ত হলেন তিনি। এসময় তার শারীরিক অবস্থা ভালো আছে বলে দাবি করেন।
তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি হিসেবে করোনার ব্যাপক ভয়াবহতা চলছে। এরই মধ্যে ভয়াবহ কয়েকটি ধরণও শনাক্ত হয়েছে ওই দেশে। ভারত থেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে দেশে ফেরার বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভারত ফেরত ওই ব্যক্তির শরীরে যদি ভ্যারিয়েন্টের জীবাণু থাকে তাহলে বড় বিপদে পড়তে হবে। কারণ তিনি কোয়ারেন্টাইন না মেনে ২৪ ঘন্টা বাড়িতে অবস্থান করেছেন। সাধারণ অন্য মানুষের সাথে চলাফেরা করেছেন। যা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে।
সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান জানান, ভারতে আক্রান্ত কোন ধরনের করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি আব্দুস সালামের শরীরে আছে তা নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

 

Comments (0)
Add Comment