মেহেরপুরে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে খুন

জড়িত সন্দেহে একজন গ্রেফতার : বহুবিয়ে কিংবা ঘটকতালিও মৃত্যুর কারণ বলছে এলাকাবাসী
মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরে তোফাজ্জেল হোসেন (৫২) নামের এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের হরিরামপুর গ্রামের বিলপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তোফাজ্জেল হোসেন ওই গ্রামের মৃত বকসের ছেলে। তিনি মূলত ছাগল কেনা-বেচার ব্যবসা করতেন। খবর পেয়ে গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এদিকে রাতে পুলিশ ছাগল ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে লিটন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। লিটন মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের তেরোঘরিয়া গ্রামের আসাদ আলী ছেলে এবং হরিরামপুর গ্রামের আজমত আলীর জামাতা। লিটন নিহত তোফাজ্জলের সঙ্গে ছাগলের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী মনিতাজ খাতুন জানান, গত পরশু রোববার রাত দশটার পর তার স্বামী তোফাজ্জেল হোসেন বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। রাতে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পেতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে নিজ গ্রাম হরিরামপুরের মাঠের মধ্যে তার লাশ পড়ে থাকতে দেখে কৃষকরা তার পরিবারকে খবর দেয়। তিনি আরো জানান, ছাগল কেনা-বেচার ব্যবসার পাশাপাশি তিনি বিয়ের ঘটকের কাজও করতেন। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করছেন নিহতের পরিবার।
নিহতের মেজভাই তোজাম্মেল হোসেন জানান, তার ভাই সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে ব্যবসায়িক কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরতো। সন্ধ্যার দিকে একপাক ইছাখালী গ্রামের মেয়ের বাড়ি গিয়ে মেয়ে-জামাইয়ের সাথে দেখা করে সকাল সকাল বাড়ি ফিরতো। তার সাথে এমন কারো শত্রুতা ছিলো না। তবে লাশ পাওয়ার পরে দেখা গেল ঘাতকরা তার কপালে হাতুড়ি দিয়ে মেরে কপালে গর্ত করে দিয়েছে। তার হাত ও পা ভেঙে দিয়ে জবাই করেছে। তার লাশ পুলিশ বীভৎস্য অবস্থায় উদ্ধার করেছে। তিনি মনে করেন দুবৃত্তরা তার কাছ থেকে টাকা-পয়সা লুট করতে তাকে হত্যা করে থাকতে পারে। তবে এলাকার অনেকে বলছে বহু বিয়ে কিংবা ঘটকতালিও তার মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
বুড়িপোতা ইউনিয়নের সদস্য হরিরামপুর গ্রামের মো. স্বার্থক আলী জানান, গাংনীর কাথুলী গ্রামের আজমত আলী দীর্ঘ সময় হরিরামপুর গ্রামে বাস করতেন। স্ত্রী মনিতাজ খাতুনকে নিহত তোফাজ্জেল হোসেন দ্বিতীয় বিয়ে করেন। যে কারণে আজমত আলী বর্তমানে গাংনী উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামে বসবাস করছেন। এদিকে দ্বিতীয় বিয়ে করায় তোফাজ্জেল হোসেনের প্রথম স্ত্রী এক ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে তাকে ছেড়ে চলে যান। আটক লিটন নিহত তোফাজ্জেল হোসেনের নিকের বউয়ের আগের পক্ষের জামাই। সে অত্যন্ত লোভী প্রকৃতির। বিগত তিন মাস ধরে সে হরিরামপুর গ্রামে বাস করছে এবং তোফাজ্জেল হোসেনের সাথে ঘোরাঘুরি করে আসছিলো।
মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অপু সরোয়ার বলেন, হত্যা রহস্য উদঘাটনের জন্য মোবাইল ট্রাকিং করে গতরাতে ছাগল ব্যবসায়ী লিটনকে আটক করা হয়েছে। ছাগল ব্যবসায়ী নিহত তোফাজ্জলের কাছে সবসময় মোটা অংকের অর্থ গচ্ছিত থাকতো। ওই টাকা নেয়ার জন্য আগের দিন রাতে চায়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে কৌশলে তাকে মাঠের মধ্যে নিয়ে যায়। তোফাজ্জল যখন ঘুমের ঘরে অচেতন হয়ে পড়ে তখনই তাকে গাছের ডাল দিয়ে আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

Comments (0)
Add Comment