করোনা আক্রান্ত ছেলের দুঃশ্চিন্তায় গাংনীতে মায়ের মৃত্যু : ঢাকায় মারা গেলেন বাওটের এক আইনজীবী

মৃত্যু আর মৃত্যু

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনী শহরের পশু হাসপাতালপাড়ায় জোবাইদা খাতুন (৭০) নামের এক বৃদ্ধা গতকাল মঙ্গলবার সকাল দশটার দিকে মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনা আক্রান্ত ছেলের দুঃশ্চিন্তায় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন তার বড় ছেলে জহুরুল ইসলাম। অপরদিকে ঢাকায় বসবাসকারী বাওট গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবী আব্দুস সালাম (৭৩) কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুর পর গতকাল মঙ্গলবার গ্রাম্য কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে ওই বৃদ্ধা করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন এলাকার মানুষের এমন সন্দেহে তার নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্যবিভাগ।
বৃদ্ধার বড় ছেলে জহুরুল ইসলাম বলেন, আমার স্ত্রী একজন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারী। তিনি গত ৩ জুলাই করোনা শনাক্ত হয়। একই বাড়িতে পরিবারের সকলে বসবাস করায় তার সংস্পর্শে আমার মেয়ে ও ছোট ভাই সোমবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়। ছোট ভাইকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং আমার স্ত্রী ও মেয়ে নিজ বাড়িতে রুম আইসোলেশনে রয়েছে। এ নিয়ে বৃদ্ধ মায়ের দুঃশ্চিন্তা বেড়ে যায়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন। গতকাল সকালে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এম রিয়াজুল আলম বলেন, ওই পরিবারে তিনজন কোভিড-১৯ পজিটিভ। করোনাভাইরাস উপসর্গ নিয়ে বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে তাই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় তার মরদেহ দাফন করেছে প্রশাসন।
এদিকে ঢাকা মিরপুরের সাড়ে ১১ এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সালাম গত ১৯ জুন কোভিড-১৯ পটিভ হন। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হলে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে (কোভিড বিশেষায়িত হাসপাতাল) ভর্তি করেন পরিবারের লোকজন। সেখানে সোমবার রাত এগারটার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মরদেহ নিজ বাড়িতে আনার পর গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে গ্রাম্য করবস্থানে বিশেষ ব্যবস্থায় দাফন করে প্রশাসন।
আব্দুস সালাম বাওট গ্রামের কৃতি সন্তান। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণে তিনি যুদ্ধ করেছেন পাক সেনাদের বিরুদ্ধে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের ভিপি ছিলেন। এইসএসসি পাস করে তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। লেখাপড়া সম্পন্ন করে একটি চাকরি করতেন। অবসরে যাওয়ার পর গত ১৫-১৭ বছর ধরে আইনজীবী পেশায় কাজ করেছেন। তিনি ঢাকাস্থ মেহেরপুরিয়ানদের সংগঠন পরিবর্তনের মেহেরপুর ও মেহেরপুর জেলা কমিউনিটি ক্লাবের সদস্য ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার (০৬ জুলাই) পর্যন্ত মেহেরপুর জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯৪। এর মধ্যে সদরে ৫০, গাংনী ৩৬ আর মুজিবনগরে ৮। মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের (সদর ২, গাংনী ২ ও মুজিবনগররে ১)। আক্রান্তের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩৪ জন (সদর ১৮, গাংনী ১৩ ও মুজিবনগরে ৩ জন)। অন্যত্র পাঠানো হয়েছে ৯ জনকে (সদর ৫, গাংনী ৪)। ফলে সর্বমোট পজিটিভ রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ৪৬ জন (সদর ২৫, গাংনী ১৭ ও মুজিবনগরে ৪)।

Comments (0)
Add Comment