সামনে আরো ভয়াবহ বিপদ : বাঁচতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার: দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অনেকটা লাগামহীন মৃত্যু ও শনাক্ত। প্রতিদিনেই ভাঙছে রেকর্ড। বিধিনিষেধ আরোপের পরেও সংক্রমণ, মৃত্যুর হার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় সংকট আরো বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে চিকিৎসা এবং জরুরি সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো। কোনো হাসপাতালে বেড খালি নেই, অক্সিজেন সংকট, আইসিইউ শয্যা খালি নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, সামনে আরো ভয়াবহ বিপদ। এভাবে যদি রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে আর সংক্রমণ রোধ না করা যায়, তাহলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত হাসপাতালে যে পরিমাণ রোগী চিকিৎসাধীন আছে কিংবা আক্রান্ত হয়েছে তাদের সামাল দিতে কয়েক মাস সময় লাগবে। এরপর যদি বাড়তে থাকে তাহলে রোগী সামাল দেয়া কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। আক্রান্তের সংখ্যা কমাতে না পারলে পরিস্থিতি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তাই বাঁচতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
এদিকে দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর দিন যতো গড়াচ্ছে মৃত্যুর সংখ্যা ততই বাড়ছে। আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির গতিও কমছে না। সংক্রমণ এড়াতে কঠোর বিধিনিষেধ শুরুর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতকাল সোমবার ৮৩ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে, যা এই যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যা। আগের দিনে সর্বোচ্চ ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছিলো। এ নিয়ে করোনায় দেশে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৮২২ জন। একদিনে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৭ হাজার ২০১ জন। আগের দিনে শনাক্ত হয়েছিল ৫ হাজার ৮১৯ জন। সব মিলিয়ে দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা হলো ৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৫৭ জন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ৪ হাজার ৫২৩ জন। মোট সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৮১ হাজার ১১৩ জন। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ৭ দিনে ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে করোনা আক্রান্তদের মৃত্যুর সংখ্যা। এর মধ্যে গত ৬ এপ্রিল মৃত্যু হয় ৬৬ জনের, ৭ এপ্রিল ৬৩ জনের, ৮ এপ্রিল ৭৪ জনের। এরপর গত ৯ এপ্রিল মৃতের সংখ্যা কিছুটা কমে ৬৩ জনে নামলেও ১০ এপ্রিল এই সংখ্যা বেড়ে ৭৭ জনে উন্নীত হয়। ১১ তারিখ একজন বেড়ে মৃতের সংখ্যা হয় ৭৮ জন এবং সোমবার এই সংখ্যা ৮৩ জনে পৌঁছে। দেশে করোনা সংক্রমণের এক বছরের বেশি সময়ে এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা।
করোনার লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর উপচেপড়া ভিড়। কোনো হাসপাতালেই শয্যা খালি নেই। অসুস্থ রোগীদের নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীর স্বজনরা। শুধু চিকিৎসা সেবা নয়, নমুনা পরীক্ষা করাতেও ভোগান্তির অন্ত নেই। সকাল থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকে পরীক্ষা করাতে পারছেন না। করোনা রোগীর চাপ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তাদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে সরকার। এ বছর ৩১ মার্চ তা ৯ হাজার ছাড়িয়ে যায়। সংক্রমণ ধরা পড়ার এক বছর পর চলতি বছর মার্চের শেষে প্রথমবারের মতো দেশে এক দিনে পাঁচ হাজারের বেশি রোগী শনাক্তের খবর আসে। এর মধ্য দিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৯ মার্চ ছয় লাখ ছাড়িয়ে যায়। এরপর মাত্র এক সপ্তাহে সেই তালিকায় যোগ হয় আরও অর্ধলাখ নাম। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে বুধবার দেশে রেকর্ড ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি ২৫৫টি ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা সংগৃহীত হয়েছে ৩৬ হাজারটি। আর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৬৮টি। দেশে এখন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫০ লাখ ৩৭ হাজার ৮৩৩টি। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬৩৬টি আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১২ লাখ ৭৮ হাজার ১৯৭টি। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং মৃত্যু হার এক দশমিক ৪২ শতাংশ।
এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৮৩ জনের মধ্যে পুরুষ ৫৪ জন এবং নারী ২৯ জন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৭৪ জন, বাড়িতে পাঁচজন ও হাসপাতালে মৃত অবস্থায় এসেছেন চারজন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত পুরুষ মারা গেছেন সাত হাজার ৩৩৩ জন এবং নারী দুই হাজার ৪৮৯ জন। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব ৫২ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৬ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১১ জন এবং ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে চার জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৫৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭ জন, খুলনা বিভাগে চারজন, রাজশাহী বিভাগে তিনজন। বরিশাল ও সিলেট বিভাগে দুজন করে চারজন। এছাড়া রংপুর বিভাগে একজন রয়েছেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছেন ৮২১ জন ও আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৩১৭ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে এসেছেন এক লাখ ১১ হাজার ৯৫২ জন। আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ৯৫ হাজার ৮৮৮ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৬ হাজার ৬৪ জন।

Comments (0)
Add Comment