চুয়াডাঙ্গায় করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪৭ : নতুন শনাক্ত ১৩১ জন

নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে কোভিড-১৯ শনাক্তের হার কমেছে বেড়েছে সুস্থতার সংখ্যাও : শিথিল লকডাউনে নিজের প্রয়োজনে সতর্ক থাকার তাগিদ

ছোঁয়াচে বিষের ছোবলে শুধু বয়স্করাই কাবু নয় দামুড়হুদার ১২ বছরের এক কিশোরীরও প্রাণ ঝরেছে
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও ৪ জন ও উপসর্গ নিয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পৃথক সময়ে এ ৫ জনের মৃত্যু হয়। অপরদিকে বুধবার চুয়াডাঙ্গার আরও ১৩১ জন নতুন করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগী শানাক্ত হয়েছে। গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় শনাক্তকৃত সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ছিলো ২ হাজার ৩৩ জন। এর মধ্যে নিজ বাড়িতে ছিলেন ১ হাজার ৯শ ১৫ জন ও হাসপাতালে ছিলেন ১শ ১৮ জন। করোনায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ১২ বছরের এক কিশোরীও রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ বুধবার ৪৭৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে। এদিন ৪৯৬ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৩১ জন করোনা ভাইরাস সংক্রমিত তথা কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছে। বুধবার শনাক্তকৃত ১৩১ জনের মধ্যে সদর উপজেলার ৬৪জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ২৫জন, দামুড়হুদা উপজেলার ১৭ জন ও জীবননগদর উপজেলার ২৫ জন। দীর্ঘদিন ধরে লকডাউনের সুফল মিলতে শুরু করেছে দামুড়হুদা উপজেলায়। আজ বৃহস্পতিবার থেকে লকডাউনের বিধি নিষেধ শিথিল হচ্ছে। নিজ নিজ অবস্থানে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে আবারও অবস্থার ভয়াবহ অবনতি হতে পারে। ফলে সকলকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না পেরিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পুনঃপুন: তাগিদ দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার। তিনি বলেছেন, মাস্ক বাধ্যতামূলক। লকডাউন শিথিল হলেও সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি সকলকে মাস্ক পরতেই হবে। অন্যথায় সংক্রমণ বাড়তে পারে। সে লক্ষ্যে মাস্ক না পরলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে যাদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে এদের মধ্যে রয়েছেন জীবননগর উথলীর ইবারত আলীর ছেলে বিশারত আলী। তিনি গতকাল বুধবার দুপুরে হাসপাতালের রেডজোনে মারা যান। সূত্র বলেছেন, বিশারত আলী সর্দি কাশি জ¦রে আক্রান্ত হলে তার নমুনা পরীক্ষা করা হয। কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়। ৭ জুলাই তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল দুপুরে মারা যান ২৯ বছরের বিশারত আলী। তার মৃতদেহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফনের নির্দেশনা দেয়া হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের কেদারগঞ্জপাড়ার বিশু শেখের স্ত্রী সুন্দরী খাতুন সম্প্রতি সর্দি কাশি জ¦রে আক্রান্ত হন। তাকে গত ১২ জুলাই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। নমুনা পরীক্ষা করে তিনিও কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগী হিসেবে শনাক্ত হন। গতকাল বুধবার ভোররাতে ারা যান ৪৯ বছর বয়সী সুন্দুরী খাতুন। দামুড়হুদা দলকা লক্ষ্মীপুরের কাকলী সর্দি কাশি জ¦রে ভুগছিলেন। নমুনা পরীক্ষার করে তারও করোনা পজিটিভ হয়। গতকাল মারা যান কাকলী। কাকলীর প্রোযত্মে কলাম। তার বয়স নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি। তবে গ্রামসূত্রে জানা গেছে, আবুল কালামের মেয়ে কাকলীর বয়স মাত্র ১২ বছর। চুয়াডাঙ্গা কলোনিপাড়ার রমজান আলীর ছেলে বাবুল সর্দি কাশি জ¦রে ভুগছিলেন। তাকে ১১ জুলাই চুয়ডাঙ্গা সদর হাসপাতালের হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। র‌্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষার তার কোভিড-১৯ নেগেটিভ হয়। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার নমুনা পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার আগেই গতকাল বুধবার মারা যান বাবুল। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের নূরনগরের সুসাহেবের স্ত্রী সায়েরা খাতুন সর্দি কাশি জ¦রে ও গলায় ব্যথায় ভুগছিলেন। তাকে গত পরশু মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার এক পর্যায়ে গতকাল মারা যান সায়েরা খাতুন। তিনি করোনা ভাইরাস আক্রান্তের উপসর্গে ভুগছিলেন। সিভিল সার্জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৪ জনের মৃত্যুর খবর জানালেও একজনের নাম ঠিকানা যানা সম্ভব হয়নি। তবে একসূত্র বলেছে, যার বিস্তারিত ঠিকানা পাওয়া যায়নি তার বাড়ি আলমডাঙ্গা উপজেলায়।
চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গায় বুধবার করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪ জন। এ নিয়ে জেলায় মৃতের সংখ্যা ১৪৭ জন। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গাতেই মারা গেছেন ১৩১ জন। চুয়াডাঙ্গার বাইরে মারা গেছেন ১৬ জন। বুধবার নতুন ৪৭৮ জনের নমুনা নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে মোট নুমানা নেয়া হয়েছে ১৮ হাজার ১শ ৯০ জনের। বুধবার ৪৯৬ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মোট রিপোর্ট পাওয়া গেছে ১৮ হাজার ১শ ৯০ জনের। নতুন ১৩১ জন শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৫ জন। বুধবার সুস্থ হয়েছেন ৮৭ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হলেন ২ হাজার ৮শ ৭৫ জন। গত এক সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগী শনাক্তের হার কিছুটা হ্রাস পেয়ে ২৮ দশমিক ৩০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের মোট ৮৪ জন কর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ইতোমধ্যেই সুস্থতা পেয়েছেন ৭১ জন।

Comments (0)
Add Comment