শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে ১২ সেপ্টেম্বর : মুখরিত হয়ে উঠবে স্কুল-কলেজ-মাদরাসা

মধ্য নভেম্বরে এসএসসি ডিসেম্বরের গোড়ায় এইচএসসি পরীক্ষা
স্টাফ রিপোর্টার: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে প্রায় ১৮ মাস ধরে নিষ্প্রাণ ছিলো দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলো। ইউনিসেফের তথ্যমতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম দেশ। এ বন্ধ্যা সময় কাটিয়ে ফের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরছে শিক্ষাঙ্গনে। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে আবারও শিক্ষার্থীদের পদচারণা, শিক্ষকদের পাঠদান আর সহপাঠীদের আড্ডা, হাসিতে মুখরিত হয়ে উঠবে স্কুল-কলেজ-মাদরাসাগুলো। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শুক্রবার তার নিজ নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুর সদর উপজেলার মহামায়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের উদ্বোধন শেষে তিনি এ কথা জানান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘গত সভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বর্ধিত করেছিলাম ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আশা করছি ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সব প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারবো।’
বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা আবারও বসবো। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল নেয়। আমরা উপাচার্যদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তারা বলেছেন, অন্তত সব শিক্ষার্থী যদি প্রথম ডোজ টিকা নিতে পারে তাহলে ভালো হয়। সেজন্য আমরা একটা তারিখ নির্ধারণ করেছিলাম অক্টোবরের মাঝামাঝি। এখন তাদের সঙ্গে আবারও কথা বলবো, ওনারা যদি অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে খুলতে রাজি হন কিংবা ভিন্ন কোনো তারিখ নির্ধারণ করেন সেটি ওনাদের বিষয়।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ৫ সেপ্টেম্বর আমাদের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা রয়েছে। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। স্কুল খুলে দেয়ার পরে দৈনিক বাধ্যতামূলক প্রতিবেদন প্রেরণের বিষয় রয়েছে। যেন কঠোরভাবে মনিটরিং করতি পারি, যেন স্বাস্থ্যবিধি সকলে মেনে চলে স্কুলগুলোতে। এর মধ্যে মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মচারীদের টিকাদান কর্মসূচি সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আগেই বলেছিলেন ১৮ বছরের বেশি বয়সিদের টিকা দানের ব্যবস্থার কথা। এখন ১২ বছরের উপরে যারা আছে, তাদেরকেও টিকা দেয়ার কাজ শুরু করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। কাজেই যে টিকা তাদের দেয়ার মত, তেমন টিকা সরকার নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছে। পর্যায়ক্রমে তা দেয়া হবে।’
স্বাস্থ্যমিধি মেনে চলতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘শুধু এককভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় এটি এককভাবে নিশ্চিত করতে পারবে না। শিক্ষক, শিক্ষার্থী অভিভাবক সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সে ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের পাশাপাশি প্রশাসনসহ সকলের সহায়তা কামনা করছি।’ দীপু মনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যে দীর্ঘসময় বন্ধ ছিলো তার সুফল আমরা পেয়েছি। আমাদের দেশে সংক্রমণ সেভাবে বাড়েনি। তবে অন্য দিকে আমাদের শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক সমস্যাও হয়েছে। সকল দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সে সিদ্ধান্তই আমরা এখন নিচ্ছি সংক্রমণের হার কমে যাওয়ায়।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের ঘোষণা ছিলো এসএসসি পরীক্ষা হবে মধ্য নভেম্বরে এবং এইচএসসি পরীক্ষা হবে ডিসেম্বরের গোড়ায়। সেই সিদ্ধান্ত কোনো পরিবর্তন হয়নি।’ পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, ‘সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকেই অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হচ্ছে। অ্যাসাইনমেন্ট করলেই পরীক্ষার প্রস্তুতি হয়ে যাবে। পরীক্ষা হওয়া নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, ইনশাআল্লাহ।’ এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির বৈঠকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পক্ষে মত দেন সদস্যরা। বৈঠক শেষে রাত পৌনে ১২টায় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, করোনা সংক্রমণ সর্বোচ্চ শনাক্ত থেকে ৭০ শতাংশ কমেছে। ধীরে ধীরে করোনার টিকা প্রাপ্তিও নিশ্চিত হচ্ছে। এজন্য সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বেশ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া সাপেক্ষে এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যায়। এরপরই শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বিদ্যালয় খুললেও শুরুতে এক সঙ্গে সব শ্রেণির পাঠদান হবে না বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ধাপে ধাপে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠদান হবে। জানা গেছে, সবার আগে স্কুলে-কলেজে আসবে এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। প্রতিদিনই তারা ক্লাস করবে। বাকি শ্রেণির ক্লাস শুরুতে একদিন পরপর করে হবে। পরে অবস্থা বুঝে ধীরে ধীরে তা বাড়ানো হবে। তবে, একই সঙ্গে অনলাইন ও টেলিভিশনের ক্লাসও চলবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এমনিতে সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। শিক্ষকরাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন, অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম চলছে। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। বড় কোনো সমস্যা না হলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে না।
গত ১৮ আগস্ট সচিব সভায় করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং টিকা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবারও জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব তাড়াতাড়ি স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার জন্য তিনি নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। এরই মধ্যে আমি স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা কর্মরত তাদের পরিবারের সদস্যদের টিকা দেয়ার ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।’
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত হয়। ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। মরণ ভাইরাসটির বিস্তার রোধে ওই বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর সংক্রমণ পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি না হওয়ায় দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে কয়েক দফা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার প্রস্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটি চলমান রয়েছে। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ছুটি আর বাড়ছে না। জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফের ২৪ আগস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর কারণে স্কুল বন্ধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম দেশ। দীর্ঘ বন্ধের ফলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা স্তরের চার কোটির বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

Comments (0)
Add Comment