উপসর্গ দেখা দিলেই পরীক্ষা করানো জরুরি

হালকা জ্বর? কোনো গন্ধ পাচ্ছেন না? কিম্বা এসবের কিছুই হয়নি, শুধু নাকে সর্দি আর গলাব্যথাসহ খুশখুশে কাশি? অসুস্থতার এরকম উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত করোনা পরীক্ষা করানো উচিৎ। অন্যথায় রোগ জটিল রূপ নিলে সুস্থ করে তোলা যেমন কঠিন, তেমনই ছোয়াছে ওই ভাইরাস আপনার মাধ্যমে ছড়াবে আরও। উতে পরিবারের সদস্যদের যেমন বাড়বে স্বাস্থ্য ঝুকি, তেমনই সমাজকেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। নিজে এব অন্যকে সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা ছাড়া এই মুহূর্তে বিকল্প নেই। সকলকেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়া জরুরি। অন্যথায় পরিস্থিতি এগিয়ে যাচ্ছে বেশামালের দিকে। যা কাম্য নয়।
আমার শরীর, আমার স্বাস্থ্য, আমার পরিবার যা হয়ে যায় যাক, এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দেয়ার সুযোগ নেই। দেশের প্রচোলিত আইনেও এমন উক্তি আওড়ে রোগ ছড়ানোর অধিকার কাউকে দেয়নি। সংক্রমণ রোধে দেশে কঠোর লকডাউন চলছে। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ঝিনাইদহ কুষ্টিয়া মেহেরপুরসহ দেশের অধিকাংশ এরাকায় করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে। ব্যাপকহারে মানুষ মারা যাচ্ছে। গতকালও দেশে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ মারা গেছে। যার মধ্যে বেশিরভাগই খুলনা বিভাগের। এরপরও কি দায়িত্বশীল না হয়ে উদাসীনতার পরিচয় দেবেন? এটা ঠিক যে, যখন কোন মানুষ সুস্থ থাকেন তখন সুস্থ থাকাটা কতটা জরুরি তা উপলব্ধি করেন না। অসুস্থ হলে সুস্থতার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন। করোনা ভাইরাসে সংক্রমতি হলেই যে মৃত্যু তা নয়। অধিকাংশ মানুষই সুস্থ হয়ে উঠছেন। অল্প কিছু মানুষ মারা যাচ্ছেন। তাই বলে ওই অল্পের মধ্যে যে আপনি পড়বেন না তা হলফ করে বলা যাবে না। ডেল্টা ভেরিয়েন্ট শুধু বৃদ্ধদের কাবু করছে না, অল্পবয়সীদেরও জীবন কাড়ছে। ভাইরাসের এ ধরণ শরীরে ঢুকে ফুসফুসকে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত করছে। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত করোনা সংক্রান্ত প্রতিবেদনের একাংশে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের মন্তব্যেও এ বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রয়োজনীয় ওষুধেরও পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই তাও তিনি অকপটে স্বীকার করে বুঝিয়েছেন, সকলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুস্থ থাকুন, অন্যকে সুস্থ রাখুন। রোগীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তাতে বেশামাল হওয়ারই উপক্রম। এরপর অক্সিজেনেরও স্বল্পতা ইতোমধ্যেই ফুটে উঠেছে। শ্বাসবায়ু নিতে না পারলে কতটা কষ্ট তা উপলব্ধি করতে হবে। কোন বিশ^াস কিম্বা কুসংস্কার এ রোগ থেকে মুক্তি দিচ্ছে না। সব ধরনের মানুষই আক্রান্ত হচ্ছেন এবং তাদের অনেকেই মারা যাচ্ছেন। তবে এটা বলার অবকাশ রাখে না যে, যারা উপসর্গে ভুগছেন অথচ পরীক্ষা করাচ্ছেন না, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিচ্ছেন না তাদের বেশিরভাগেরই অবস্থা শঙ্কাটাপন্ন হয়ে উঠছে। যেমন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে যতোজন করোনা ওয়ার্ড তথা রেডজোনে ভর্তি রয়েছেন তার তুলনায় হলুদ জোনে ভর্তি রোগীদের অবস্থা বেশি খারাপ। কেনো? কারণ, সর্দি কাশি গলায় ব্যথা, গায়ে ব্যথা, গন্ধ না পাওয়াসহ করোনা উপসর্গে ভুগলেও পরীক্ষা করাননি। নিজের মতো করে ওষুধ সেবন করেছেন। যখন শ^াসকষ্ট তথা ফুসফুসের সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে তখনও তাদের নেয়া হয়েছে হাসপাতালে। ভর্তি করা হয়েছে হলুদ জোনে। এদেরই বাঁচিয়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়ছে। এবং চুয়াডাঙ্গায় এখনও পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার রোগীর তুলনায় উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যাই বেশি। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে এটা এখনও স্পষ্ট নয়।
করোনা ভাইরাস শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়। এ সমস্যা বৈশি^ক। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা এ রোগকে বিশ^ মহামারী হিসেবে ঘোষণা করেছে। দিয়েছে সুস্থ থাকার নির্দেশনা। এ নির্দেশনাকেই স্বাস্থ্যবিধি হিসেবে সরকার জারি করেছে। স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে রয়েছে জরুরি প্রয়োজন না হলে বাড়ি থেকে বের হওয়ার দরকার নেই। বাড়ি থেকে বের হতে হলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। একে অপরের সাথে সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখতে হবে। ঘুরে ফিরেই ২০ সেকেন্ড ধরে শাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। শাবান পানির সংকট থাকলে হ্যান্ড সেনিটাইজার দিয়েও হাত ধোয়া যাবে। এসব নির্দেশনার পাশাপাশি জ¦র হলেই নমুনা দিয়ে পরীক্ষা করানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে।

Comments (0)
Add Comment