দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিলো পদ্মা সেতু

সম্পাদকীয়

পদ্মা সেতু একটি স্বপ্ন, এটি অপার সম্ভাবনার নাম। একটি দেশের মর্যাদার ও অহঙ্কারের প্রতীক, অর্থনীতির নতুন সোপান। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এই পদ্মা সেতু। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে, নানা কেলেঙ্কারির অভিযোগ থেকে মুক্ত হয়ে আগামী ২৫ জুন যানবাহন চলাচলের জন্য পদ্মা সেতুর দ্বার উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে। ওইদিন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা বহুমুখী সেতুর উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পদ্মা সেতুর নাম পদ্মা নদীর নামে হবে।

এরই মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করে পদ্মা সেতু পারাপারে টোল নির্ধারণ করেছে সরকার। প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, মোটর সাইেকলের জন্য টোলের হার ১০০ টাকা; কার, জিপ ৭৫০ টাকা; পিকআপ ভ্যান এক হাজার ২০০ টাকা; মাইক্রোবাস এক হাজার ৩০০ টাকা; ছোট বাস (৩১ আসন বা তার কম) এক হাজার ৪০০ টাকা; মাঝারি বাস (৩২ আসন বা তার বেশি) ২ হাজার টাকা; বড় বাস (৩ এক্সেল) ২ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ছোট ট্রাকের জন্য (৫ টন পর্যন্ত) এক হাজার ৬০০ টাকা; মাঝারি ট্রাক (৫ থেকে ৮ টন পর্যন্ত) ২ হাজার ১০০ টাকা; মাঝারি ট্রাক (৮ থেকে ১১ টন পর্যন্ত) ২ হাজার ৮০০ টাকা; বড় ট্রাক (৩ এক্সেল পর্যন্ত) ৫ হাজার ৫০০ টাকা; ট্রেইলার (৪ এক্সেল পর্যন্ত) ৬ হাজার টাকা এবং ট্রেইলার (৪ এক্সেলের অধিক) ৬ হাজার টাকার সঙ্গে প্রতি এক্সেলের জন্য এক হাজার ৫০০ টাকা যুক্ত হবে। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, টোলের এ হার পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচলের দিন থেকে কার্যকর হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্যদিয়ে দৃশ্যমান হতে শুরু করে পদ্মা সেতুর কাঠামো। এর পরপর একে একে ৪২টি পিলারে বসানো হয় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৪১টি স্প্যান। ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হয় ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর। এই স্বপ্ন পূরণের জন্য সরকার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলো। এই চ্যালেঞ্জে সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজয়ী হয়েছেন। তিনি পরিষ্কার করে বলে দিলেন ‘পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নেই হবে।’ অবশেষে তাই হলো। পাঁচ বছরের নিরলস শ্রমে মাথা তুলে দাঁড়ালো এর পরিপূর্ণ কাঠামো। এ সেতু চালু হলে দক্ষিণের ২৯টি অবহেলিত জেলা যুক্ত হবে সমগ্র বাংলাদেশের সঙ্গে। প্রকৃত পক্ষেই এটা বাংলাদেশের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ জানে, ফেরি পাড়ি দিয়ে পদ্মা পার হওয়া ভয়ঙ্কর এক অস্বস্তিকর ও দীর্ঘ ভোগান্তির কাজ। এর মধ্যে যথেষ্ট বিড়ম্বনা ও ঝুঁকিও রয়েছে। এর ফলে ৭-৮ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা লেগে যায়। প্রতিদিনই এই ধরনের অমানবিক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। আর এটা চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ার কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষ যেভাবে যাতায়াত সুবিধা ভোগ করতে পারছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ সেভাবে পারছে না। এবার তাদের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।

দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো হবে এ পদ্মা সেতু। যা অত্যাধুনিক স্টিল দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমান সরকার অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে সেতুর কাজ শেষ করেছে। সরকারের এই উদ্যোগ আজ সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছে। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।

পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতুই নয়, এটি বাংলাদেশের মানুষের স্বাবলম্বিতার প্রতীক। এটি আমাদের ঐক্য ও অটল মনোবলের স্মারক। আমরাও নিজের প্রচেষ্টায় বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণ করে পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিতে পারি, এটা তার উজ্জ্বল উদাহরণ। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব যে সত্যি সত্যিই বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় পদ্মা সেতু নির্মাণ তার উজ্জ্বল উদাহরণ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক তার আপন মহিমা নিয়ে।

 

Comments (0)
Add Comment