বজ্রপাতে প্রাণহানি অত্যন্ত বেদনাদায়ক

সম্পাদকীয়

দেশে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বজ্রপাত। গত শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের ১১ জেলায় বজ্রপাতে অন্তত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহে মারা গেছেন ৬, সিরাজগঞ্জে ৩, রাজশাহীতে ২ জন। এছাড়া নওগাঁ, বগুড়া, জামালপুর, ঢাকা, নাটোর, চুয়াডাঙ্গা, গাজীপুর ও দিনাজপুর জেলায় একজন করে মারা গেছেন। এ ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। বজ্রপাতে ৮৬ শতাংশ মৃত্যু হয় ফসলের মাঠে। এতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৭০ শতাংশ কৃষক ও জেলে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বজ্রপাতের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণায়নের সম্পর্ক রয়েছে। এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এ সময় অসহনীয় গরমে বজ্রপাতের আশঙ্কা ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বাতাসে সিসার পরিমাণ বাড়া, অধিক ধাতব পদার্থের ব্যবহার, মোবাইল ফোনের অতি ব্যবহার, মোবাইল ফোনের টাওয়ারের সংখ্যার আধিক্য, বনভূমি বা গ্রামাঞ্চলে উঁচু গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, জলাভূমি ভরাট ও নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে বজ্রপাতের সংখ্যা বাড়ছে। সঙ্গত কারণেই সার্বিক এ পরিস্থিতি আমলে নেয়া জরুরি।

উল্লেখ্য, জাপানের জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেমের তথ্য অনুযায়ী, বজ্রপাতে বেশি মানুষ মারা যায় বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাট, বগুড়া, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায়। আমরা মনে করি, যখন মাঠে ফসলের ক্ষেতে কাজ করা বা মাছ ধরার সময় বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন বজ্রপাতে- তখন বিষয়টি আমলে নেয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে এটাও উল্লেখ করা দরকার, দেশে প্রতি বছর গড়ে ২ হাজার ৪০০ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। আগে তালগাছ বজ্রপাত ঠেকাত। এখন তালগাছ ও উঁচু গাছ নেই বললেই চলে। বিশ্বে বছরে বজ্রপাতে যতো মানুষ মারা যাচ্ছে, তার অর্ধেকই বাংলাদেশে এই তথ্য অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। বজ্রপাতে বিপুলসংখ্যক গাছপালা ও গবাদিপশুও মারা যায়। এছাড়া মৃত্যুর চেয়ে বেশি মানুষ আহত হন। আহতদের চিকিৎসা বা ওষুধ নেই দেশের হাসপাতালগুলোতে এমন তথ্যও প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বাংলাদেশে দশমিক ৭৪ শতাংশ তাপমাত্রা বেড়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্যই বাড়ছে বজ্রপাত। বাংলাদেশে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করা হয়েছে। বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় এক কোটি তালগাছ লাগিয়ে ঠেকানোর পরিকল্পনা নেয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। কোথাও কোথাও তাল গাছের চারা ও বীজ রোপণ করা হলেও তা রক্ষণাবেক্ষণ না করায় তা নষ্ট হয়েছে বা গরু-ছাগলে খেয়ে ফেলেছে। এছাড়া রাস্তা সম্প্রসারণের নামে তালগাছসহ বড় বড় গাছও কাটা হচ্ছে। দুর্যোগকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই- কিন্তু যথাযথ উদ্যোগ নিলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগ জরুরি।

Comments (0)
Add Comment