মুদ্রানীতি ঘোষণা লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে

সম্পাদকীয়

মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকে তারল্য সংকট, টাকার দরপতনের মতো নেতিবাচক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলো। নতুন মুদ্রানীতিতে রেপো রেট বা নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে, সেইসঙ্গে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে, ভোক্তা ঋণের সুদহারের সীমা শিথিল করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেপো রেট ৫.৭৫% থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৬% করা হয়েছে। আর রিভার্স রেপো হার আগের ৪% থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৪.২৫% করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ ঘাটতির ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে যে সুদহারে অর্থ ধার দেয় সেটাই রেপো রেট। আর রিভার্স রেপো রেট হলো যে, সুদহারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে। ঘোষিত ভোক্তা ঋণের সুদহার ৩% বাড়িয়ে ১২% করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ব্যাংক আমানতের বেঁধে দেয়া সুদহার তুলে দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে ক্রেডিট কার্ড ঋণের ক্ষেত্রে কোনো সীমারেখা থাকছে না।

তবে, ভোক্তা ঋণ ছাড়া সব ধরনের ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশেই নির্ধারিত থাকবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থাৎ শিল্প ঋণসহ অন্যান্য ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার বাড়ানোর সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি। একইভাবে বিশেষ রেপো হার আগের মতই ৮% এবং ব্যাংক রেট ৪% রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক বছরে একটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করে আসছে। তবে এবার সংকট সামাল দিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার। এ ঋণের অন্যতম শর্ত বছরে অন্তত দু‘বার মুদ্রানীতি ঘোষণা করা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৭.৫% প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি ৫.৬% ধরে রাখার পরিকল্পনা নির্ধারণ করে সরকার। অবশ্য সংশোধিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬. ৫০% করা হয়েছিলো। যদিও বিশ্বব্যাংক বলেছে, প্রবৃদ্ধি ৫.২০% এর মধ্যে থাকবে। কিন্তু সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৮.৭১% শতাংশে দাঁড়িয়েছে, আর গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৭.৭০% হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, নতুন মুদ্রানীতি সরকারের জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওই লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির চিত্র সামনের দিনগুলোয় কেমন হবে সেটি তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে। ১. রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কাল ও তীব্রতা, ২. মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার বৃদ্ধির উদ্যোগ, ৩. চীনে পুনরায় ছড়িয়ে পড়া কোভিড পরিস্থিতি। এসব প্রতিকূল পরিস্থিতির নিরসন হলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক আমানতের বেঁধে দেয়া সুদহার তুলে দেয়া হয়েছে, এটা একটি ইতিবাচক দিক। এর ফলে গ্রাহক আস্থা অনেকটাই ফিরে আসবে। ফলে তারল্য সংকট কমে আসবে। দেশের ব্যাংক খাতের দীর্ঘদিনের স্থবিরতার অবসান ঘটবে। মূল্যস্ফীতি কমবে কিনা এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কারণ এ দেশে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে অসৎ ও অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা। তারাই ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দেয়। এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ জরুরি।

Comments (0)
Add Comment