সুন্দর দিন কামনাসহ সকলকে ঈদ মোবারক

বছর ঘুরে আবারও এসেছে ঈদ। ঈদ উল ফিতর। ইসলাম ধর্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎস। ঈদ আরবি শব্দ, যার অর্থ খুশি বা আনন্দ। ঈদ একাধারে উৎসব ও ইবাদত। এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে ঈদ মানুষকে পাপ পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর অনুগ্রহ অর্জনের শিক্ষা দিয়ে থাকে। ঈদ ধনী-গরিব সব মানুষ মেতে ওঠার উৎসব। কিন্তু এবার ব্যাতিক্রম। যে ঈদ বৈষম্য ও ভেদাভেদ ভুলে মানুষে মানুষে সৃষ্টি করে সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ, সেই ঈদে এবার সকলেই ঘরবন্দি। ঈদের কেনা কাটা নেই, নেই দূরে থাকা কর্মজীবী মানুষের আপন ঠিকানায় ফেরার তোড়জোড়। নোভেল করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ নামের ভয়াবহ ছোঁয়াছে রোগ সকলকেই যেনো পৃথক করে ফেলেছে।
মহানবী (সা.) মদিনায় হিজরত করার আগে আরব জাতি ‘নাইরোজ’ ও ‘মেহেরজান’ নামে দুটি উৎসব পালন করতো। মহানবী (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর অশ্লীলতায় নিমজ্জিত উৎসব দুটির মূলোৎপাটন করে মুসলমানদের জন্য চালু করেন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা নামে দুটি ধর্মীয় উৎসব। মূলত মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তখন থেকেই শুরু হয় ঈদ উৎসব পালনের প্রচলন। মুসলমানেরা ঈদের দিনে জামাতে দুই রাকাত ঈদের ওয়াজিব নামাজ আদায় করেন। ঈদের নামাজ ঈদগাহ বা খোলা ময়দানে আদায় করা উত্তম। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। ঈদগা ময়দানে নয়, মসজিদে এবং অল্প সংখ্যক মসুল্লি নিয়ে একাধিক জামায়াতের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে মূলত ওই ছোঁয়াছে রোগের কারণেই।
ঈদে অবস্থাপন্ন ধনী লোকেরা নির্দিষ্ট হারে দরিদ্র মানুষের মধ্যে ফিতরা বা জাকাত বিতরণ করেন, যা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ধনীদের জন্য বাধ্যতামূলক। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই যাতে সমভাবে ঈদের আনন্দে অংশ নিতে পারে, সে জন্য ইসলাম ধর্মে ফিতরা ও জাকাত প্রথার প্রবর্তন করা হয়েছে। এই আইন অমান্যকারীদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। ঈদুল ফিতর মুসলমানদের জন্য অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। ঈদ অর্থ খুশি বা আনন্দ আর ফিতর হচ্ছে ফিতরা। সহজ পরিভাষায় ঈদুল ফিতর হচ্ছে দান খয়রাতের মাধ্যমে আনন্দ ভাগাভাগি করা। ইসলামের জাকাত ও ফিতরা ব্যবস্থা ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করেছে। ঈদুল ফিতরের শিক্ষা হচ্ছে মানুষে মানুষে সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করা। এবার ওই কোলাকোলিও বারণ। প্রত্যেকেরই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে নিজের এবং অন্যের তথা সমাজের স্বার্থেই।
ঈদের নতুন কাপড় কেনার সুযোগ থেকেও অনেকেই বঞ্চিত। এতে মনকষ্টের কারণ নেই। কেনো না, সুস্থ থাকলে আগামীতে অনেক ঈদ পাওয়া যাবে। ছোয়াছে ওই রোগ মানুষের ব্যাপকহারে প্রাণ কাড়ছে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপালাভসহ মুসলিম জাহানের কল্যাণ কামনায় সকলেই দোয়া করলে চলমান সংকট নিশ্চয় দ্রুত কেটে যাবে। এমন সাদামাটা ও একঘেয়ে ঈদ আর কখনো পালন করছে কিনা তা স্পষ্ট নই। এবারের পরিবত্র রমজানে অনেকেই মারা গেছেন, অনেকেই রয়েছেন অসুস্থ। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কাজকর্ম বন্ধ থাকায় অর্থনীতিতেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। ফলে ঈদ তথা উৎসব আনন্দেও পড়ছে ভাটা। এটা নিতান্তই সাময়িক। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিশ্বহোক রোগমুক্ত। এ কামনায় সকলকে ঈদ মোবারক।

Comments (0)
Add Comment