এবারও হচ্ছে না পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষা : প্রত্যেক শ্রেণিতে সমাপনী মূল্যায়ন

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে মাউশির চার নির্দেশনা
স্টাফ রিপোর্টার: শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, এবার পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষা নেয়া হবে না। অন্যদের মতোই পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বছর শেষে সমাপনী মূল্যায়ন করা হবে। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষ্যে এদিন তিনি রাজধানীর কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৃক্ষরোপণ করেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এখন এসএসসি-এইচএসসি একদম সামনে। আমাদের সব প্রস্তুতি আছে। কিন্তু মনে হচ্ছে না এখন আর জেএসসি নেয়ার সুযোগ থাকছে। কিন্তু প্রত্যেক শ্রেণিতে সমাপনী মূল্যায়নগুলো হবে। অ্যাসাইনমেন্টগুলোও চলছে। পিইসি-জেএসসি সেইরকম হবে না। অন্যান্য শ্রেণির সঙ্গে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিরও সমাপনী মূল্যায়ন হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আমার আজই কথা হয়েছে। আমরা শিগগির বসব। বসে বিচার-বিশ্লেষণ করব।’ শিক্ষার্থীদের টিকা এবং অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি মানা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরীক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় বা উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী-যাদেরই বয়স ১৮ হয়ে যাবে, তারা নিবন্ধন করতে পারবে এবং এর মধ্যে টিকা দেয়া হয়ে যাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে অধিকাংশ স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। কিন্তু গেটের বাইরে অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মায়েরা ভিড় করছেন। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি যতটা মানা দরকার তারা ততটা মানছেন না। তাদের কারণে সংক্রমণের একটা ঝুঁকি থেকেই যায়। কাজেই আমরা চাই, শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং শিক্ষাব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতরা যেমন এ নিয়ে কাজ করছেন তেমনি অভিভাবকরাও সচেতন হবেন। কারণ তারা সংক্রমিত হলে সন্তানরা সংক্রমিত হতে পারেন। এভাবে সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বিশেষ ঘটনা ছাড়া সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। বিশেষ যে ঘটনা জানা যাচ্ছে, তখনই সেটার ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। একটি হোস্টেলে তিন ছাত্রীর করোনা শনাক্ত হয়। সেই হোস্টেল আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। পাশাপাশি ওই শ্রেণির ক্লাসও ১৫ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এভাবে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এখন সংক্রমণ ৪ শতাংশের নিচে। সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে যাচ্ছে। সবকিছু খোলা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন যদি সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি তাহলে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও বলেন, অভিভাবকদের কাছে বিশেষ করে পরীক্ষার সময়ের ব্যাপারে অনুরোধ রাখতে চাই, তারা যেন সন্তানকে ভেতরে দিয়ে চলে যান। আবার পরে এসে নিয়ে যান। এই পরিবেশে বাইরে জটলা বেঁধে বসা ঠিক নয়। আমাদের রাজনৈতিক প্রোগ্রামেও এমনটি দেখা যাচ্ছে। আসলে মূল কথা হচ্ছে, আমাদের সচেতন হতে হবে। শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, যারা পরীক্ষার্থী তারাই দৈনিক ক্লাস করছে। টেলিভিশন, বেতার, অ্যাসাইনমেন্ট, ওয়ার্কশিট নানাভাবে শিক্ষার্থীরা সিলেবাস শেষ করেছে। কেউ কেউ বাড়িতে নিজেরা পড়েছে। যে কারণে দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা কম আসছে। আর এটাও ঠিক যে, অনেক অভিভাবকই সন্তানকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। তা ছাড়া কেউ অসুস্থ হলে কিংবা বাড়িতে কেউ অসুস্থ থাকলে স্কুলও তাদের বাড়িতেই থাকছে বলছে। স্কুল বন্ধ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ ঘটনা কেজি স্কুলগুলোর ক্ষেত্রে বেশি ঘটেছে। তাদের বেশির ভাগ ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হচ্ছে। অনেকের সরকারি নিবন্ধন নেই। প্রণোদনা পেতে হলে তাদের রেজিস্ট্রেশনের অধীনে আসতে হবে। এলে আমরা দেখতে পারব।
নতুন করে পুরোনো নির্দেশনা: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে চারটি নির্দেশনা জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন উইং থেকে জারি করা নির্দেশনাগুলো মাউশির মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তা এবং অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকরা বাস্তবায়ন করবেন। নির্দেশনায় বলা হয়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফের শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। এজন্য একটি গাইডলাইন ও স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) জারি করা হয়। এ ছাড়া মনিটরিং চেক লিস্টের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দৈনিক ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হচ্ছে। নির্দেশনাগুলো হচ্ছে-সব শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের পর প্রথমেই শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে খোঁজখবর নেবেন। শিক্ষার্থীর পরিবারের কেউ করোনা আক্রান্ত বা কারও করোনার কোনো লক্ষণ (জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি) আছে কিনা, তার খোঁজ নেবেন। কোনো শিক্ষার্থী বা তার পরিবারের কেউ করোনা বা করোনার লক্ষণ থাকলে দ্রুত সেই শিক্ষার্থীকে আইসোলেশনে রেখে বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। প্রতিষ্ঠানপ্রধান ওই শ্রেণিকক্ষের শিক্ষক ও সব শিক্ষার্থীর দ্রুততম সময়ের মধ্যে করোনা টেস্ট করার ব্যবস্থা নেবেন।

Comments (0)
Add Comment