দর্শনায় পরিছন্নকর্মীদের কাছে জিম্মি পৌরবাসী কথায় কথায় কাজ বন্ধ বেতন বৃদ্ধি দাবিতে ধর্মঘট

দর্শনা অফিস: দর্শনা পৌরসভার পরিছন্ন কর্মীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে পৌরবাসী। কথায় কথায় কাজ বন্ধ করে দেয়া এখন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তুলনামূলক বেতন বেশি দেয়া হয়। তবুও বেতন বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেছে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। দর্শনা একটি ছোট্ট পৌর শহর। আয়াতনের দিক দিয়ে ছোট হলেও শহরকে পরিষ্কার রাখতে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়। পরিচ্ছন্নকর্মী সংখ্যায় বেশি থাকলেও পরিষ্কারের দিকে পিছিয়ে পৌরবাসী। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনায় পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে নোঙড়া দেখা যায়। দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি বিবেচনা করে সাবেক প্রয়াত মেয়র মতিয়ার রহমান পরিছন্নকর্মীদের দাবির কারণে বেতন বাড়িয়ে দুগুণ করেছিলেন। পরিচ্ছন্নকর্মীদের বেতন সাড়ে ৪ হাজার থেকে বাড়িয়ে করেছিলেন ৯ হাজার টাকা। তবে শর্ত দিয়েছিলেন, সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শহর পরিষ্কার ঝকঝকে করে রাখতে হবে। বাস্তবতায় ঠিক উল্টো দেখা যায়। বেতন বৃদ্ধি পেলেও পরিচ্ছন্নতার দিকে আগের অবস্থাতে রয়ে গেছে পৌর এলাকা। দর্শনা পৌরসভায় পরিচ্ছন্নকর্মী ২১জন। শর্ত মাফিক দায়িত্ব পালন করা হলে ছোট শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার কথা। যেখানে সেখানে যত্রতত্র আবর্জনা ও ড্রেনগুলোও ময়লায় ভরে থাকার কথা নয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জীবননগর পৌরসভায় পরিছন্নকর্মীদের দৈনিক ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা হাজিরা দেয়া হয়। চুয়াডাঙ্গা ১ম শ্রেণির পৌরসভায় দৈনিক হাজিরা ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। আলমডাঙ্গা পৌরসভায় মাসিক বেতন আড়াই হাজার থেকে ৬ হাজার পর্যন্ত। সেই ক্ষেত্রে দর্শনা পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীদের তুলনামূলকভাবে বেশি ও সংখ্যাতেও অতিরিক্ত। ২১জন পরিচ্ছন্নকর্মী প্রায় সমবয়সী হওয়ায় তারা দলবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করে থাকে। পৌরসভার কনজারভেন্সি সুপারভাইজার আব্দুর রাজ্জাক জানান, তারা সকাল ৬টার দিকে এসে চা দোকানে বসে চা-পান খেয়ে সাড়ে ৬টার দিকে কাজে বের হলেও ৮টার মধ্যেই ফিরে আসে পৌরসভায়। কাজের কথা বললেই বিভিন্ন অজুহাত দেখায়। আজ বেশি গরম পড়ছে, কাজ বেশি হয়ে গেছে, অতিরিক্ত গন্ধে কাজ বেশি সময় করা যায় না, বাড়িতে বাজার নেই, অন্য একটা কাজ আছে, কাল ঠিক করে দেব, কাজ পছন্দ না হলে আমাদের বাদ দিয়ে দেন সহ নানা বাহানা হাজির করে থাকে। এ বিষয় পৌর প্রশাসককেও অবহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, নিয়মিত তদারকি করছি এবং কর্মীদের সতর্ক করেছি। বারবার বলা সত্ত্বেও তারা সিন্ডিকেট করে কাজ বন্ধ রেখেছে। তবে কিছু পরিচ্ছন্নকর্মী নিজেদেরকে হরিজন সম্প্রদায়ের ঐক্য দেখিয়ে প্রভাব খাটিয়ে থাকে। গত শনিবার থেকে তারা ফের বেতন বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেছে। বন্ধ রেখেছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নাতার কাজ। এ বিষয়ে পরিছন্নকর্মী রতন জানান, বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় আমরা ২/৩ মাস ধরে বেতন বাড়াতে বললেও সচিব স্যার আমাদের সাথে বসবো, বললেও বসেননা। যে কারণে কাজ বন্ধ করেছি। প্রয়োজনে রাস্তায় নামবো। আমাদের বেতনও বকেয়া রাখা হয়। ঠিকমত বেতন ও বেতন বৃদ্ধি না করলে বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে চলবো কিভাবে? দর্শনা পৌর সচিব সাজেদুল আলম জানান, পৌরসভার নিয়মিত কর্মচারীদের দীর্ঘদিন বেতন বকেয়া থাকলেও পৌর প্রশাসক স্যার পরিচ্ছন্নকর্মীদের বেতন কখনই বকেয়া রাখেননি। আমি তাদেরকে বলেছি চুয়াডাঙ্গা জেলার অন্য পৌরসভার বেতনের তালিকা নিয়ে আসতে। তারা এখনো কোন পৌরসভার তালিকা দেখাতে পারেনি। অন্য পৌরসভা আমাদের তুলনায় বেতন বেশি দিলে আমরাও বাড়াবো। পৌর প্রশাসক কেএইচ তাসফিকুর রহমান বলেন, বেতন বৃদ্ধির জন্য পরিছন্ন কর্মীরা কাজ বন্ধ রেখেছে। আমি তাদের বলেছিলাম জেলার অন্য পৌরসভার সাথে মিল রেখে বেতন বৃদ্ধি করা হবে। এখন পর্যন্ত কোন পৌরসভার বেশি বেতনের তালিকা দেখাতে পারেনি। তবে আলোচনা চলছে, দ্রুত সমাধান হবে আশা করছি।