একই পরিবারের ৩ জনকে হত্যা, পালক সন্তানের মৃত্যুদণ্ডপাবনায় চাঞ্চল্যকর অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল জব্বারসহ পরিবারের ৩ সদস্য হত্যা মামলার রায়ে পালক সন্তান ও পাবনা ফায়ার সার্ভিস মসজিদের ইমাম তানভীর হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সোমবার দুপুরে পাবনার অতিরিক্ত দায়রা জজ ৩য় আদালতের বিচারক মো. তানবীর আহমেদ এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণাকালে আসামি কাঠগড়ায় ছিলেন।
রায়ে প্রত্যেককে হত্যার জন্য আলাদাভাবে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং চুরির অপরাধে ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ডসহ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
দণ্ডপ্রাপ্ত মো. তানভীর হোসেন নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর থানার হরিপুর পূর্বপাড়া (রাইগাঁ) গ্রামের মো. হাতেম আলী সরদারের ছেলে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার, তার স্ত্রী ছুম্মা খাতুন এবং তাদের পালিত মেয়ে সানজিদা ওরফে জয়া পাবনা শহরের দিলালপুর মহল্লার ফায়ার সার্ভিস অফিসের পাশে আ. খালেকের দোতলা বিল্ডিংয়ের নিচতলায় ভাড়া থাকতেন। আসামি তানভীর হোসেন তাদের বাসার পাশে একটি চালের দোকান দিয়ে ব্যবসা এবং ফায়ার সার্ভিস মসজিদে ইমামতি করতেন।
ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল জব্বারের পরিবারের লোকজন আসামির দোকান থেকে নিয়মিত চাল কেনার সুবাদে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় এবং আ. জব্বার ও তার স্ত্রী আসামি তানভীরকে সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। এ সম্পর্কের সুযোগে আসামি তানভীর ওই বাসা থেকে টাকাপয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার চুরির জন্য ২০২০ সালের ৩১ মে রাতে আ. জব্বার, তার স্ত্রী মোছা. ছুম্মা বেগম ও তাদের পালিতা মেয়ে সানজিদা ওরফে জয়াকে কুপিয়ে ও কাঠের বাটাম দিয়ে মাথায় আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যার পর বাসার আলমারিতে থাকা স্বর্ণালংকার, টাকা পয়সা, মোবাইল সেট ইত্যাদি চুরি করে বাসার বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে রেখে বাসা থেকে পালিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যায়।
পরবর্তীতে ৬ দিন পর তালাবদ্ধ বাসা থেকে পচা লাশের গন্ধ বের হলে স্থানীয় লোকজন পুলিশে সংবাদ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরের তালা ভেঙে তিনজনের পচা গন্ধ লাশ উদ্ধার করে। ওই দিনই নিহত আব্দুল জব্বারের ভাই বাদী হয়ে তানভীরকে একমাত্র আসামি করে পাবনা থানায় মামলা করেন।
পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আসামি তানভীরকে গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়। দীর্ঘ সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে আদালত সোমবার চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় দেন।
বাদীপক্ষে অতিরিক্ত পিপি আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু মামলাটি পরিচালনা করেন। আসামিপক্ষে কেএম মিজানুর রহমান ও কাজী মকবুল আহমেদ বাবু মামলাটি পরিচালনা করেন।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম সরোয়ার খান জুয়েল জানান, একই সঙ্গে ৩ জনকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় একমাত্র আসামির উপযুক্ত শাস্তি হয়েছে।