ইসরাইলের আগ্রাসি হামলায় গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ : ৪৭ শিশুসহ নিহত ১৮১

হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা নেতানিয়াহুর : আত্মরক্ষার অধিকার ইসরাইলের আছে : বাইডেন

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: গাজায় আগ্রাসি হামলার তীব্রতা আরো বাড়িয়েছে ইসরাইল। গতকাল রবিবার ভোরের আগেই নতুন করে বিমান হামলায় গাজার তিনটি স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। এতে অন্তত ৩৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে আট শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আরো অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছেন। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া বর্বরোচিত হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮১ জনে, যাদের মধ্যে ৫২ জন শিশু এবং ৩১ নারী রয়েছেন। গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরাইল। শত শত ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে হামাসের রকেট হামলায় ইসরাইলে নিহতের সংখ্যা দুই শিশুসহ ১০ জন। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, হামাসের রকেট হামলা থেকে আত্মরক্ষার অধিকার ইসরাইলের আছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে ফোনালাপের পর এ কথা বলেন। যদিও তার অবস্থান নিজ দলের মধ্যেই বিভেদ তৈরি করেছে। ওআইসি ইসরাইলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘ ও ইইউ জরুরি বৈঠকে বসছে। বিভিন্ন দেশ ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে। বিশ্ব জুড়ে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভও হয়েছে।
গাজা শহরের পশ্চিমে শনিবার একটি শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বিমান হামলায় এক পরিবারের ১০ জন সদস্য নিহত হন, যাদের মধ্যে আট জন শিশু ও দুই জন নারী। ঐ পরিবারে শুধু পাঁচ মাসের শিশু ওমর আল-হাদিদি বেঁচে যায়।
ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) জানিয়েছে, রবিবার তারা হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইয়েহইয়েহ সিনওয়ার বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে। স্থাপনাটি তাদের সামরিক অবকাঠামো হিসেবে ব্যবহূত হতো বলেও দাবি করা হয়। আইডিএফ জানায়, হামাস কয়েক শ রকেট নিক্ষেপ করেছে যাতে দুই শিশুসহ ১০ ইসরাইলি নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, দেশটির সামরিক বাহিনী যতক্ষণ প্রয়োজন, গাজায় হামলা অব্যাহত রাখবে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গনতেজও জানিয়েছেন, ইসরাইল উত্তেজনা বাড়াতে চায় না। কিন্তু যে কোনো পরিস্থিতির জন্য তৈরি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে বলেছেন যে, তিনি ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন দিয়ে যাবেন। হোয়াইট হাউজ এ তথ্য জানিয়েছে। তিনি দুটি অংশেই মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং টাওয়ার ব্লকে হামলার পরে তিনি সাংবাদিকদের সুরক্ষা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট আব্বাসের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি তাকে বলেছেন, তিনি মার্কিন-ফিলিস্তিন অংশীদারিত্ব জোরদার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এদিকে শুক্রবার পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি জনতা ও ইসরাইলের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। গাজায় ইসরাইলের হামলার প্রতিবাদে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন হেব্রন ও নেবলুস শহরে। এসময় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে অন্তত ১১ ফিলিস্তিনি নিহত হন।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে হামলার ঘটনায় বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি মিডিয়া ভবনে হামলার ঘটনারও নিন্দা জানিয়েছেন।
ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জরুরি আলোচনায় বসবেন মঙ্গলবার। এরই মধ্যে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রঁ শুক্রবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন। গাজা থেকে রকেট হামলার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি অঞ্চলটিতে বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। গতকাল জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে টুইটারে বলেছেন, যে বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা অপ্রত্যাশিত পরিণতি বয়ে আনতে পারে। সহিংসতা থামিয়ে দুই পক্ষকে দুই রাষ্ট্রবিষয়ক আলোচনায় ফেরার আহবান জানান। নিরীহ মানুষজন হতাহত ও শিশু মৃত্যুর ঘটনাকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে, হামলার মাধ্যমে ইসরাইল যুদ্ধাপরাধ করেছে। চীন দ্রুত জাতিসংঘের বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছে। দেশটি এই পরিস্থিতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে।

Comments (0)
Add Comment