কুষ্টিয়া সুগারমিল থেকে চিনি গায়েবের ঘটনায় থানায় জিডি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া সুগারমিলের সুরক্ষিত গুদাম থেকে রহস্যজনকভাবে ৫২ মেট্রিক টন চিনি উধাও হওয়ার ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন কর্তৃপক্ষ। শনিবার রাতে মিলের সহকারী ব্যবস্থাপক হায়দার আলী কুষ্টিয়া মডেল থানায় জিডিটি করেছেন। জিডিতে খোয়া যাওয়া চিনির পরিমাণ উল্লেখ করে হয়েছে ৫২ দশমিক ৭ মেট্রিক টন এবং যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩৩ লাখ ২০ হাজার ১০০ টাকা। জিডিতে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন এবং স্টোর কিপার ফরিদুল হককে বরখাস্তের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। চুরির ঘটনায় মিল কর্তৃপক্ষের জিডির বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার (ওসি) সাব্বিরুল আলম জানান, থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে বন্ধ হয়ে থাকা কুষ্টিয়া সুগারমিলের সুরক্ষিত গোডাউন থেকে রহস্যজনকভাবে চিনি উধাও হওয়া সংক্রান্ত সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর থেকে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই চুরির সঙ্গে মিলের বর্তমান এমডি, ক্যাশিয়ার, সিকিউরিটি ইনচার্জসহ অনেকেই জড়িত রয়েছেন। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান।
এদিকে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে সুগারমিলের মহা-ব্যবস্থাপক (কারখানা) কল্যাণ কুমারকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা বলয় ভেদ ও সুরক্ষিত গোডাউনে রক্ষিত বিপুল পরিমাণ চিনি কীভাবে গায়েব হলো তা নিয়ে চিনিকলের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
উল্লেখ্য, ধারাবাহিক লোকসানসহ নানা কারণে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকলের মধ্যে কুষ্টিয়াসহ ছয়টি চিনিকলের উৎপাদন বন্ধ করে দেয় সরকার। মিলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হলেও গত তিন মরসুমের উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ চিনি অবিক্রিত রয়ে যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কুষ্টিয়া চিনিকলে অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা এটিই নতুন নয়। এর আগে দুর্নীতির দায়ে ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর কুষ্টিয়া চিনিকলের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মুর্শেদ (এমডি) সুগারমিলের সিবিএ সভাপতি ফারুক হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমানকে একযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
গত ১৯ বছরে কুষ্টিয়া সুগারমিলে লোকসান হয়েছে ৪২০ কোটি টাকা। ফলে শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দৌরাত্ম্য, চরম দুর্নীতি, ব্যবস্থাপনায় ক্রুটি ও ক্রমাগত লোকসানে ২০২০-২১ অর্থবছর মিলে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
এদিকে ঐতিহ্যবাহী এ মিলটি বন্ধ থাকায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কর্ম হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

Comments (0)
Add Comment