চুয়াডাঙ্গার গড়াইটুপি বাজারের একজন পাখিপ্রেমী জমির ৭ বছর ধরে পাখির খাবার দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন

লাবলু রহমান: আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টি কৌশলের এক মহানিদর্শন অনিন্দ্যসুন্দর ও পরম আকর্ষণীয় পক্ষীকুল। আকাশে ডানা মেলে পাখিরা উড়ে বেড়ায় এবং নিজস্ব ভাষা ও পদ্ধতিতে সৃষ্টিকর্তার গুণগান করে। পক্ষীকুল মানবজাতির উপকারী, পরিবেশবান্ধব এবং পৃথিবীর সৌন্দর্যের একটি প্রতীক। পাখিরা প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য সুরক্ষা করে। ধর্মভেদে জীবের প্রতি ভালবাসার কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। ঈশ্বর সর্বশক্তিমান। তিনি শাশ্বত, নিত্য ও অবিনশ্বর। তিনি সকল জীবের মধ্যে আত্মরূপে অবস্থান করেন। তাই জীব সেবা করলেই ঈশ্বরের সেবা করা হয়। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, ‘বহুরূপে সম্মুখে তোমা ছাড়ি কোথা খুঁজছি ঈশ্বর, জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর ভালোবাসা হলো এক অমোঘ শক্তি। ভালোবাসা দিয়ে সব কিছু জয় করা যায়। এমনকি ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বুনো পাখিরাও ভয় পেছনে ফেলে মানুষের কাছে ছুটে আসে। ভালোবাসার এমনি এক নজির সৃষ্টি করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি বাজারের চা দোকানি জমির চাচা। তিনি তেঘরী গ্রামের মৃত মোহাম্মদ কাজির ছেলে। সকালের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই অসংখ্য পাখির কিচিরমিচিরে মুখর হয়ে ওঠে দোকানের আঙিনা। পেশায় চা বিক্রেতা হলেও পাখির প্রতি ভালোবাসা রয়েছে তার। তাই নিয়ম করে দিনে ২/৩ বার পাখিগুলোকে খেতে দেন তিনি। খাবারের আশায় প্রতিদিন অসংখ্য পাখির আনাগোনায় মুখর হয়ে থাকে। দোকানে এমন দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন পথচারী, ব্যবসায়ী, খরিদ্দার, আশেপাশের মানুষ। প্রতিদিন নিজেই পাখিদের খেতে দেন তিনি। তার দেখাদেখি অনেকেই খাবার দেন মাঝেমধ্যে।
এ বিষয়ে জমির হোসেন জানান, গত ৭ বছর ধরে আমার দোকানের সামনে কয়েক শত শালিক পাখিসহ কয়েক প্রকার পাখি আসতে শুরু করেছে। প্রতিদিন আমি এসব পাখিকে খাবার দিই। এখন আমার দেখাদেখি মাঝে অনেকেই পাখিদের খাবার দেন। তিনি আরো জানান, প্রতিদিন এসব পাখিকে পাউরুটি, বিস্কুট, চানাচুরসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে দেন তিনি।
স্থানীয়রা বলছেন, ভালোবাসার বিনিময়ে যে অনেক কিছু জয় করা যায় তা প্রমাণ করে দিয়েছেন জমির হোসেন। ভালোবাসার বিনিময়ে পাখির সাথে সে সেতুবন্ধন তৈরি করেছেন তিনি।চলমান মহামারী করোনা ভাইরাসের মধ্যেও তিনি এ কাজ করে যাচ্ছেন। অভূক্ত পাখিদের তিনি খাওয়াচ্ছেন। অর্থবিত্ত না থাকলেও পাখিদের প্রতি তার মমত্ববোধেরই বহিঃপ্রকাশ। পরিবেশ, প্রকৃতি, জলবায়ুর ভারসাম্য ঠিক রাখতে হলে প্রকৃতির প্রাণ জীববৈচিত্র্য পাখি-বন্যপ্রাণী এদেরকে টিকিয়ে রাখতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এদের ভুমিকা অনস্বীকার্য। প্রকৃতি বাঁচলে মানুষও বাঁচবে। কিন্তু সামান্য চায়ের দোকান থেকে যে আয় হয় তাতে করে নিজের সংসার বাঁচিয়ে পাখিদের লান পালন করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে।তাই সমাজের অনেক ভালো কাজের মধ্যে এটি অন্যতম।

Comments (0)
Add Comment