চুয়াডাঙ্গায় চলতি বছর ১৫শ’ হেক্টর জমিতে আমন জাতের মুখি কচুর চাষ

ফলন আর দামে চাষিরা খুশি হলেও কিনে দুঃশ্চিন্তায় ব্যাপারী
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় গত বছরের থেকে চলতি বছর ১২৫ হেক্টর জমিতে বেশি মুখি কচুর চাষ হয়েছে। বর্তমান বাজার মূল্যে কচু চাষিরা বেশ খুশিই হয়েছেন। বিঘা প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা লাভের মুখ দেখেছেন তারা। তবে প্রতিযোগিতার বাজারে প্রতিযোগী করে কচু কিনে অনেক ব্যাপারী দুঃশ্চিন্তায় আছেন। যদিও চাষিদের কাছ থেকে দামদর করে কচু নিয়ে ব্যাপারীরা কিছু করে টাকা বায়না দিয়ে রেখেছে। ভালো দামে বিক্রি করতে পারলে চাষিরা ষোলআনা টাকা হাতে পাবে। আর লোকশান হলে চুক্তি মূল্যের কথা ঠিক রাখতে পারবে না ব্যাপারী। কচু চাষে শুধু কৃষকেরাই লাভবান হয়নি মাঠ থেকে কচু তোলা এবং বাচাই করার পেছনে অনেক খেটে খাওয়া মানুষ শ্রম বিক্রি করতে পারছেন। ফলে দাম ভালো থাকলে চাষি, ব্যাপারী এবং মুজুর বিক্রি করা মানুষ আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
জেলা কৃষিসম্প্রাসারণ সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় মোট জমির পরিমাণ ৯৪ হাজার ২২০ হেক্টর। চলতি বছর চাষিরা ভুট্টার আবাদে তেমন সুবিধা করতে না পারলেও ধান চাষে লাভবান হয়েছেন। খাদ্য শস্য ও অর্থকারী ফসলের পাশাপাশি জেলার চাষিরা নানা ধরনের সবজির চাষ করে থাকেন। সবজি চাষে জেলার গুরুত্ব অনেক বেশি। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর জেলাতে চলতি মরসুমে আমন জাতের মুখি কচুর চাষ হয়েছে ১ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমি। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ৯৬০ মেট্রিকটন। গত বছর কচু চাষ হয়েছিলো ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমি। আর কচু উৎপাদন হয়েছিলো ২৮ হাজার ৩৫০ মেট্রিকটন। এ বছর বিঘা প্রতি মুখি কচুর ফলন হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ মণ। চাষিরা এক বিঘা জমি পাইকারী বিক্রি করছে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকার মধ্যে। জমি চাষ, বীজ পরিচর্যাসহ মোট খরচ ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা হয়ে থাকে। ফলে বিঘাপতি লাভ হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। বর্তমান মুখি কচু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি। আর খুচরা এক কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। শুধু চাষিরাই লাভবান হচ্ছেন না গ্রামের খেটে খাওয়া মুজুর বিক্রেতারাও হচ্ছেন লাভবান। জমি থেকে বিক্রি উপযুক্ত করা পর্যন্ত ২শ’ টাকা মণ পায় শ্রমিকেরা। এক বিঘা জমির কচু তোলা থেকে বিক্রি পর্যন্ত ৪৫ থেকে ৫০টি লেবার লাগে। আর কচুর পাইকারি বাজার গড়ে উঠেছে খুলনা, ঢাকা, চিটাগাং, ফরিদপুর ও মাগুরাতে। গত বছর চাষিরা কচু চাষ করে লাভবান হওয়ায় চলতি বছর ১২৫ হেক্টর জমিতে বেশি কচুর চাষ হয়েছে। শুধু কচুর ছড়াই না মুখিগুলো ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়ে থাকে। ফলে ক্রমাগত চাহিদা বৃদ্ধি ও ভালো বাজারমূল্য পাওয়ায় এ বছর কচু চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। এ বছর যারা কচু চাষ করেছেন তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন। এ কচু অনেকের কাছেই প্রিয় সবজি হয়ে উঠেছে। চলতি মরসুমে এ অঞ্চলে কচুর বা¤পার ফলন ও তা বেশ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। উপযুক্ত ভূমি ও অনুকূল আবহাওয়া বজায় থাকায় এ অঞ্চলে কচুর চাষ ভালো হয়েছে। লাভজনক শস্য ও চাষাবাদে স্বল্প ব্যয় হওয়ায় এখানকার অনেক কৃষক কচু চাষকে বাণিজ্যিকভাবে গ্রহণ করেছেন। এখানে কৃষকরা বিভিন্ন জাতের কচু চাষ করছেন। কৃষি বিভাগ কৃষকদের উচ্চ ফলনজাতের কচু চাষের জন্য পরামর্শ দিয়ে আসছে। কৃষকরা এ অঞ্চলে শাদা ও লাল রংয়ের কচুসহ বিভিন্ন জাতের কচুর চাষ করে থাকে। ধান চাষের চেয়ে প্রায় ৫গুণ বেশি লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা মুখি জাতের কচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
কচুচাষি বকুল হোসেন, জাকির, ছলেমান, লালমিয়া, ফজলু, দিদার, রহমান, মালেকসহ অনেকেই বলেন, কম খরচের তুলনায় আর্থিকভাবে বেশি লাভজনক হওয়ায় অনেক চাষি কচুর চাষ করছেন। কচু চাষমূলত পয়লা ফাল্গুনে রোপণ হয়ে থাকে। তিন মাসের মাথায় অর্থাৎ আষাঢ় মাস থেকে বিক্রি শুরু হয়। আর এ বিক্রি চলে আষাঢ়, শ্রাবন, ভাদ্র ও আশি^ন মাষের শেষ পর্যন্ত।
কচুর ব্যাপারী ফুরশেদপুর গ্রামের বকুল হোসেন বলেন, এ বছর প্রায় ৭০ বিঘা কচু বায়না দিয়ে কিনেছি। চাষিরা তো দাম পাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব দুঃশ্চিন্তায় আছি। একদিকে করোনা অপর দিকে অতিবৃষ্টি। না জানি ভাগ্যে কি আছে। যদি বাজার দর না পায় তাহলে ব্যাপারীদের পাশাপাশি চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ চাষিদের সাথে দামদরের সব টাকা পরিশোধ করা হয়নি।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, ক্লান্তি হ্রাস করে কচুর মুখি এনার্জি ধরে রাখতে ও ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। ওজন কমানোর জন্য বেশ কার্যকর। কারণ এর ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম। হজম সহায়ক এই সবজিতে প্রচুর ফাইবার থাকে বলে পরিপাক প্রক্রিয়ার জন্য খুবই উপকারী। এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। পাকস্থলী পরিষ্কার করে ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে পরিপাক প্রক্রিয়ায় সাহায্য করার পাশাপাশি পাকস্থলীর বর্জ্য পদার্থ নিস্কাশনেও সাহায্য করে কচুর মুখি। হৃদস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী কচুর মুখিতে ফ্যাট ও কোলেস্টেরল কম থাকে বলে ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। দৈনিক ভিটামিন ডি গ্রহণের মাত্রার ১৯ শতাংশ পূরণ করে। কচুর ছড়া খেয়ে যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। হাইপারটেনশন কমায় হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের কম চর্বি যুক্ত ও কম সোডিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। কচুর মুখিতে ২০ গ্রাম সোডিয়াম ও ০.১ গ্রাম ফ্যাট থাকে বলে এটি হাইপারটেনশনের রোগীদের জন্য ভালো খাবার। এছাড়াও কিডনি রোগীদের জন্য ভালো। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন সি এর চমতকার উৎস কচুর মুখি। কচুর মুখি দৈনিক ভিটামিন সি এর চাহিদার ১১ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম। শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে এ বর্তুলাকার সবজিটি। এছাড়াও ভিটামিন সি ইমিউনিটি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে থাকে।

Comments (0)
Add Comment