জীবননগরের জোড়া হত্যা মামলার দুই পলাতক আসামী ঢাকায় র‍্যাবের হাতে আটক 

বিশেষ প্রতিনিধি:নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া দুই ভাইকে রাজধানীর গাবতলী থেকে গ্রেফতার

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর জোড়া হত্যা মামলার দুই এজাহারনামীয় আসামীকে রাজধানী ঢাকার গাবতলী এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। দীর্ঘ প্রায় একমাস আত্মগোপনে থাকার পর বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাতে র‍্যাব-১২ ও র‍্যাব-৪ এর যৌথ অভিযানে এই দুই আসামী ধরা পড়ে।

যৌথ অভিযানে ধরা পড়ে দুই ভাই

র‍্যাবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, র‍্যাব-১২ এর ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-৩ (সিপিসি-৩), মেহেরপুর এবং র‍্যাব-৪ এর সদর কোম্পানি, মিরপুরের একটি দল যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে। র‍্যাব-১২ এর অধিনায়ক নেতৃত্বে প্রথম অভিযানটি পরিচালিত হয় রাত ১০টা ২০ মিনিটে। ওই সময় গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে শরিফুল ইসলাম (৪০) কে গ্রেফতার করা হয়।
পরে তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে একই থানার গাবতলী গরুর হাট এলাকার একটি গলির ভেতর থেকে তার ছোট ভাই জসিম উদ্দিন (৩২) কে আটক করা হয়।

দুজনেই চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার উথলী (বড় মসজিদপাড়া) গ্রামের সইদার হোসেনের ছেলে। র‍্যাব সূত্র জানায়, তারা দুজনই জীবননগর থানার মামলা নং-১৭, তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর এজাহারনামীয় আসামী।

হত্যাকাণ্ডের পেছনের পারিবারিক দ্বন্দ্ব

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে উথলী গ্রামের মাঝেরপাড়ার মৃত খোদা বক্স মণ্ডলের দুই ছেলে,আনোয়ার হোসেন (৫৫) ও হামজা হোসেন (৪৫) এর সঙ্গে প্রতিবেশী শরিফুল ও জসিমের পরিবারের দীর্ঘদিনের জমি-সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। বিরোধের জেরে ওইদিন সকালে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র ও লাঠি-সোটা দিয়ে দুই ভাই আনোয়ার ও হামজাকে বেধড়ক মারধর করে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরই শরিফুল ও জসিমসহ একাধিক আসামী এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।

র‍্যাবের গোপন তৎপরতা ও গ্রেফতার অভিযান

র‍্যাব জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই তারা ছদ্মবেশে ঢাকায় অবস্থান করছিল। বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে র‍্যাব সদস্যরা নিশ্চিত হন যে, তারা রাজধানীর গাবতলী এলাকায় অবস্থান করছে। এরপরই যৌথ অভিযানের মাধ্যমে তাদের গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে বলেও জানায় র‍্যাব।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন নিহতদের পরিবার ও গ্রামবাসী। নিহত আনোয়ার ও হামজার স্বজনেরা বলেন,আমরা আদালতের বিচার প্রক্রিয়ায় পূর্ণ বিশ্বাস রাখি। র‍্যাব যেভাবে দ্রুত অভিযুক্তদের ধরেছে, তাতে আশা করছি ন্যায়বিচার মিলবে।

গ্রামবাসীর অনেকেই বলেন, এ ঘটনার পর থেকেই এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছিল। হত্যাকাণ্ডের মূল আসামিরা ধরা পড়ায় তারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন।

তদন্ত ও পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ

র‍্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং তাদের জীবননগর থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, র‍্যাবের হাতে ধরা পড়া আসামিদের তথ্যের ভিত্তিতে আরও কয়েকজন পলাতককে শনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, হত্যার পেছনে শুধু জমি-বিরোধই নয়, পুরোনো পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও সামাজিক আধিপত্যের বিষয়টিও জড়িত থাকতে পারে।

এলাকায় শোক ও ক্ষোভের ছায়া

উথলী গ্রামে এখনও শোকের আবহ বিরাজ করছে। নিহত দুই ভাই আনোয়ার ও হামজা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাদের মৃত্যুতে পরিবারটি এখন চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন,

এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড আগে দেখিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে, আমরা চাই বিচারও ততটাই দ্রুত হোক।

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে সংঘটিত জোড়া হত্যা মামলার দুই আসামী শরিফুল ও জসিমকে র‍্যাবের অভিযানে ঢাকায় গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে মামলার তদন্তে নতুন গতি এসেছে।
র‍্যাব জানিয়েছে, আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং পলাতক অন্যান্য আসামীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এ বিষয়ে ( সহকারী পুলিশ সুপার ) আনোয়ারুল কবির দামুড়হুদা-জীবননগর সার্কেল বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা জীবননগর থানা থেকে অলরেডি পুলিশের একটি দল পাঠিয়েছি তারা রাস্তায় আছে ওই দুই আসামিকে নিয়ে জীবননগর থানায় নিয়ে আসা হবে। পরবর্তী আইনগত বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।