স্টাফ রিপোর্টার: জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল-আমীন এবং আন্দুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা হাকিবুর রহমান লিটনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের নামে প্রকল্প দেখিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতির (পিআইসির) মাধ্যামে টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি পিআইসিদের নিকট থেকে ভ্যাট ও আয়করের নাম করে টিআর, কাবিখা প্রকল্প থেকে শতকারা ২০ ভাগ হারে টাকা নেয়ারও জনশ্রুতি রয়েছে। জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন স্থানে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য টিআর, কাবিখার মাধ্যমে ৫০ লাখ ২০ হাজার টাকা, উন্নয়ন সহায়তার নামে ১৫ লাখ ৯ হাজার ৬শ’ টাকা, বিশেষ বরাদ্দের নামে ১০ লাখ টাকা এবং এডিপির ৬ লাখ টাকা মোট ৮১ লাখ ২৯ হাজার ৬শ’ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
এর মধ্যে আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য আছিয়াকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি (পিআইসি) করে নিশ্চিন্তপুর গ্রামে এক হাজার ৮শ’ ফুট ইটের সোলিংয়ের কাজ করার কথা। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সেখানে কাগজে-কলমে কাজ শেষ হলেও পিআইসি কিছুই জানেন না। তবে, ওই প্রকল্পের ৫০ ভাগ টাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আল-আমীন আগেই তুলে নিয়েছেন বলে তিনি জানান।
জানা গেছে, ১৮০০ ফিট ইটের সোলিং করতে ইট লাগবে ৫২ হাজার ২০০ পিস। যার বর্তমান বাজার দাম ৫ লাখ ২২ হাজার টাকা। বালি লাগবে ৬০ গাড়ি। যার বাজার মূল্য এক লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং মিস্ত্রি খরচ ৪৬ হাজার ৮০০ টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ব্যয় হতে পারে। অথচ ওই কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অতিরিক্ত ২ লাখ ৯২ হাজার টাকা কার পকেটে যাবে এটা এলাকাবাসীর প্রশ্ন। শুধু নিশ্চিতপুর বা আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নে না। এ ধরনের অনিয়ম উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন জুড়ে।
আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য আছিয়া খাতুন বলেন, চেয়ারম্যান আমাকে নিশ্চিতপুর গ্রামের একটি রাস্তার কাজের পিআইসি করেছে। সেখানে কিছু কাজ করেছে ইউএনও স্যার তার অফিস স্টাফ কিবরিয়ার মাধ্যমে। আমি ঈদের আগে কিবরিয়ার নিকট ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছি। কতো টাকার কাজ আমি কিছুই জানি না। সব জানে আন্দুলবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান আর ইউএনও।
আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৫ নং ওর্য়াডের ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন পর আন্দুলবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার একটা রাস্তার কাজের পিআইসি করেছে। সেই কাজটা আমি নিজে করেছি। কিন্তু অফিস খরচ, ভ্যাট এই সব বলে আমার কাছ থেকে শতকারা ২০ ভাগ টাকা আগেই কেটে নিয়েছে ইউএনও স্যার। একই অভিযোগ করেন ৮নং ওর্য়াডের ইউপি সদস্য মাফিজুর রহমান ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য কাজল রেখা। তারাও বলেন, এই প্রথম শুনলাম টিআর কাবিখার কাজে ভ্যাট, আয়কর বাবদ শতকারা ২০ টাকা অফিসে দিতে হয়।
এ বিষয়ে আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা হাকিবুর রহমান লিটনের কাছে টাকা নেওয়ার বিষয় জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
জীবননগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অঞ্জন কুন্ড বলেন, আমি পিআইসির মাধ্যমে কাজ দিয়েছি। আমি তার মাধ্যমে কাজ বুজ করে নেবো। কে কাজ করলো, আর না করলো সেটা তাদের বিষয়। টিআর বা কাবিখার কাজে কোন ভ্যাট বা আয়কর বাবদ আমরা কারো কাছ থেকে টাকা নেইনি বা চাইনি। এ ব্যাপারে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল আমীনের সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।