ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের যুক্তি তুলে ধরতে তারেক রহমানের নির্দেশনা

স্টাফ রিপোর্টার: সপ্রয়োজনীয় সংস্কার, বিশেষ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার শেষে চলতি বছরের ডিসেম্বর বা এর আগেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করে বিএনপি। দলের এই অবস্থানের পক্ষে টেলিভিশন টকশোসহ বিভিন্ন সভা-সেমিনারে যুক্তিতর্ক তুলে ধরতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল সোমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি নেতা বা দল সমর্থিত টেলিভিশন টকশো ব্যক্তিত্বদের নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সবার বক্তব্য শোনেন তারেক রহমান। এর আগে রোববার ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধানের সঙ্গে দেখা করে (শনিবার) রাজনৈতিক দলগুলো আবারও জাতীয় নির্বাচনের তারিখ সুস্পষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। বিএনপির দাবি, ডিসেম্বরের ভেতরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। সোমবারও দলের পক্ষে যেসব বুদ্ধিজীবী ও নেতা-নেত্রী টিভিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কথা বলেন, তাদেরও একই ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমান। এতে অংশ নেওয়া একাধিক টকশো ব্যক্তিত্ব জানান, বিএনপি অতিদ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার ক্ষমতায় দেখতে চায়। প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ করে ডিসেম্বর বা এর আগেই নির্বাচন সম্ভব। এজন্য বৈঠকে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের যুক্তিতর্ক তুলে ধরতে নির্দেশনা দেন তারেক রহমান। এছাড়া দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখা বা কথা বলার ক্ষেত্রেও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। গতকাল সোমবার বিকাল ৪টার দিকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, পেশাজীবী, চিকিৎসক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ ৬২ জন অংশ নেন এ বৈঠকে। এতে জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন কর্মকা- ও কয়েকজন উপদষ্টোর ‘দুর্নীতি’র ব্যাপক সমালোচনা করে বক্তব্য দেন তারা। তারা বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কয়েকজন উপদষ্টো ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। কোথাও সরকারের কোনো ব্যর্থতা হলে বা অঘটন ঘটলে সেটি ঢাকতে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাত্র সাড়ে ৯ মাসেই কয়েকজন উপদষ্টো ও তাদের সুবিধাভোগীরা যেভাবে অর্থসম্পদের অধিকারী হয়েছেন তাতে বোঝা যায় আরও কিছুদিন ক্ষমতায় থাকলে দেশের অবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকবে। ফলে এ সরকারের প্রতি সমর্থন থাকলেও সরকারকে দ্রুত নির্বাচনমুখী হতে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। তা না হলে দেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্র আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতরাং নীতিনির্ধারণীর বিষয়টি কেন্দ্রীয় ও সিনিয়র নেতারা দেখবেন। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে এবং গণমাধ্যমে আমরা কীভাবে কথা বলব, এ বিষয়ে একটি প্রস্তুতি ও দিকনির্দেশনা দরকার।
এতে অংশ নেওয়া টকশো ব্যক্তিত্ব বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি চলমান পরিস্থিতি নিয়ে করণীয় সম্পর্কে নানা দিকনির্দেশনা দেন। এতে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সমস্যা না থাকার কথা উপস্থিত অতিথিরা জানান। এজন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়া জরুরি বলেও মনে করেন তারা। বিএনপি হাইকমান্ড জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে দলের দাবিকে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরার জন্য বলেন। এছাড়া বিচার ও সংস্কার ইস্যুতে কথা বলেন হাইকমান্ড। তবে বক্তব্যে নির্বাচনের দিকে মূল ফোকাস থাকার কথা বলেছেন। এটিই যেন মূল স্পিরিট হয়। ওই নেতা বলেন, টকশোতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার ও তরুণদের নতুন দল-এনসিপি প্রসঙ্গ না এলে কথা বলার দরকার নেই। কারণ, এনসিপির গঠনতন্ত্র, ঘোষণা ও কার্যক্রম সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। দলটির আদর্শ কী, তাও এখন পর্যন্ত পরিষ্কার নয়। টকশোতে যখন যে প্রসঙ্গ আসবে, সে অনুযায়ী বক্তব্য দিতে হবে, তা ফেস করতে হবে। এর বাইরে কথা বলার দরকার নেই। তবে মূল ফোকাস করতে হবে জাতীয় নির্বাচনকে। সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করার আহ্বান জানিয়ে রোববার তারেক রহমান বলেন, জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকার, অন্তর্বর্তী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার হোক, জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা না গেলে হয়তো নিজেদের অজান্তেই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে। এ কারণে হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে হলেও নাগরিকদের সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা জারি রাখতে হবে। প্রতিটি নাগরিককে নিজেদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার থাকতে হবে। দেশের জনগণ সরকারের করুণার পাত্র নয়। সরকার অবশ্যই জনগণের ন্যায্য দাবি শুনতে ও মানতে বাধ্য। এখানে সরকারের মান-অভিমান বা রাগ-বিরাগের কোনো সুযোগ নেই।