দর্শনা কেরুজ আনন্দবাজারে সবই আছে নেই শুধু পান বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী

নজরুল ইসলাম: দর্শনা কেরুজ আনন্দবাজার এলাকায় সব আনন্দ থাকলেও নেই সকলের পরিচিতমুখ মোহাম্মদ আলী। ৪৮ বছর ধরে বটবৃক্ষের নিচে জোড়াতালি দেয়া চৌকিতে বসে পানবিক্রেতা মোহাম্মদ আলী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। নিজে লেখাপড়া খুব বেশি করতে না পারায় ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। সন্তানদের ভবিষ্যত দেখা যাবার আগেই ধরা ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে তাকে। চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের সকালের নাস্তা সেরে অফিসে হাজিরা দেয়া কিংবা অফিসের ফাঁকে ফাঁকে পান সিগারেটে আসক্তরা ভিড় জমাতেন তার দোকানে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে আকস্মিক চলে যাওয়া কোনোভাবেই ভুলতে পারছেন না আনন্দবাজারে আড্ডা দেয়া মানুষগুলো।
পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে, দর্শনা কেরুজ চিনিকলের প্রয়াত রাউন জমাদারের ছেলে মোহাম্মদ আলী ১৯৬১ সালের ২০ আগস্ট ভারতের কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন। দেশ বিভাগের পরপরই পিতার হাত ধরে দর্শনায় চলে আসেন। ৫ ভাই ও ৫ বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। অভাব অনটনের সংসারে লেখাপড়া করার ইচ্ছা থাকলেও শেষ পর্যন্ত এসএসসি পরীক্ষাটা আর তার দেয়া হয়নি। পিতাকে সহযোগিতার জন্য আনন্দবাজারে মন্দিরের পাশে বটগাছের নিচে পান বিড়ি বিক্রির দোকান খুলে বসেন তিনি। গত ১০ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তিন সন্তানের জনক মোহাম্মদ আলীর বড় মেয়ে মাহমুদুন নেছা সেতু অর্থনীতে অনার্স শেষ করে পরের ঘরে চলে গেছে। বড়ছেলে মেহেদি হাসান কাবা রাজশাহী সিটি কলেজে ম্যাথের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আর ছোট ছেলে সাফ্ফাত হাসান কেরুজ উচ্চবিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের নবম শ্রেণির অধ্যায়নরত। বড়ছেলে কাবা বলেন, বাবার খুব ইচ্ছা ছিলো আমরা তিন ভাই বোন লেখা পড়া শিখে তার মুখ উজ্জল করবো। অভাবের সংসারে বাবা লেখাপড়া শিখতে পারেনি বলে আমাদেরকে নিয়ে খুব স্বপ্ন দেখতেন তিনি। পান বিড়ির দোকানের ওপরেই তার সংসার। ৪৮ বছর ধরে এই দোকানদারি তার। তার খরিদ্দার ছিলো মূলত কেরুজ শ্রমিক ও কর্মচারীরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবদি আনন্দবাজারে আনাগোনা করা মানুষগুলোর চাহিদা পূরণ করায় ছিলো তার দৈনন্দিন কাজ। পান সিগারেট বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে পত্রিকা পড়তেন তিনি। তার প্রিয় পত্রিকা ছিলো দৈনিক মাথাভাঙ্গা। মাঝে মধ্যে পত্রিকা না পেলে কিংবা পেতে দেরি হলে ফোন দিতেন। আজ কি মাথাভাঙ্গা পত্রিকা ছাপা হয়নি। সকাল গড়িয়ে যাচ্ছে এখনও পত্রিকা পেলাম না। মানুষের জীবনের অতীতকে কখনও মুছে ফেলা যায় না। আবার অতীত কখনো ফিরেও আসে না। বর্তমানের কঠিন বাস্তবতায় মানুষ ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা আর আশার দোলাচলে যখন দিশেহারা তখন শুধুই শূণ্য হয়ে পড়ে আছে মোহাম্মদ আলীর জোড়াতালি দেয়া পানবিক্রির দোকানখানি।

 

Comments (0)
Add Comment