দুই দশকের গরুর ভুঁড়ি বিক্রেতা মেহেরপুরের রোকেয়া খালা চান বয়স্ক ভাতা

মহাসিন আলী: ষাটোর্ধ্ব বয়সে একটু আরাম আয়েশ করার কথা। কিন্তু দুই দশকের পেশা অনুযায়ী আজও শহরের পাড়া মহল্লার বাড়িতে বাড়িতে ছুটছেন গরুর ভুঁড়ির ভাগা বিক্রি করতে। এ কাজ না করলে যে স্বামীর ওষুধ কেনাসহ পাঁচ সদস্যের সংসারে ভাত-কাপড় জুটবে না। মেহেরপুর শহরের পাড়া-মহল্লার অতিপরিচিতমুখ রোকেয়া খাতুন (৬৩) ওরফে রোকেয়া খালা। তিনি মেহেরপুর শহরের ১নং ওয়ার্ড নতুনপাড়ার অসুস্থ আবু হোসেনের স্ত্রী। ভুঁড়ির ভাগা বিক্রি করে সংসার সচল রাখলেও বর্তমানে তিনি বয়স্কভাতা চান।
রোকেয়া খাতুন তিন ছেলে ও এক মেয়ের জননী। বড় ছেলে ইমাদুল আইসক্রিম বিক্রেতা ও মেজ ছেলে মহিবুল ইটভাঙা গাড়ির লেবার। একমাত্র মেয়ে শাহিদাকে মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী গ্রামে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট ছেলে শহিদুল মারা গেছেন। বড় ছেলে ও মেজ ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার করছেন।
সংসারের চাকা ঘোরাতে রোকেয়া খাতুন প্রায় দুই দশক আগে থেকে গরুর ভুঁড়ি কিনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ভাগা (এক কেজির অংশ) করে শহরের পাড়া-মহল্লায় বিক্রি করে বেড়ান। ছোট বড় অনুযায়ী প্রতিটি গরুর ভুঁড়ি তিনি কেনেন সাড়ে তিন হাজার থেকে ছয় হাজার টাকার মধ্যে। পরিষ্কার ও ভাগা করে দুই থেকে তিন ঘণ্টা পাড়া-মহল্লায় ঘুরে বিক্রি করেন। এতে তার প্রতিদিন প্রায় চারশ’ টাকা থেকে পাঁচশ’ টাকা লাভ হয়।
লাভের টাকা ও স্বামীর রিকশা চালানোর আয় ও ছোট ছেলের আয় দিয়ে ৬ সদস্য বিশিষ্ট রোকেয়া খাতুনের সংসার খুব ভালোভাবে চলতো। কিন্তু বিধি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ছোট শহিদুল প্রায় ১০ বছর আগে মারা যান। রেখে গেছেন স্ত্রী এবং এক ছেলে ও এক মেয়ে। এছাড়া প্রায় দেড় দশক স্বামী বিছানাগত। এখন আর স্বামী আয়-রোজগার করেন না। বরং এখন এ বয়সে তাদের দু’জনের জন্য প্রতিদিন দুইশ’ টাকার ওষুধ কিনতে হয়। এরপর ছোট ছেলের রেখে যাওয়া স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ পাঁচ সদস্যের সংসার চালতে খুব কষ্ট হচ্ছে বলে জানালেন রোকেয়া খাতুন। তিনি মনে করেন এখন তার বয়স্ক ভাতা প্রয়োজন। এজন্য তিনি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সাথে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়েছেন।
শহরের বাসস্ট্যান্ডপাড়ার গৃহবধূ মনিরা আক্তার জানান, সদা মিষ্টি হাসির মানুষ রোকেয়া খালাকে প্রায় বিশ বছর ধরে গরুর ভুঁড়ির ভাগা বিক্রি করতে দেখে আসছি। তার বয়স অনেক হয়েছে। তাই সরকারিভাবে তার আর্থিক সাপোর্ট দরকার।
এ ব্যাপারে জানাতে চাইলে মেহেরপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মীর জাহাঙ্গীর বলেন, বৃদ্ধা রোকেয়া খাতুন বয়স্ক ভাতার জন্য আমাকে একাধিকবার বলেছেন। সরকারি বিধি মোতাবেক উনার বয়স ৬২ বছর পূর্ণ না হওয়ায় তা করে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুযায়ী তার বয়স ৬৩ বছর চলছে। সত্ত্বর তাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয়া হবে।
এদিকে মেহেরপুর শহর সমাজসেবা অফিসার কবীর মাহমুদ জানান, বয়স্ক ভাতা কিংবা বিধবা ভাতার জন্য জনপ্রতিনিধির দ্বারস্থ না হয়ে বিধি মোতাবেক সমাজসেবার নির্ধারিত ফরম পূরণ করে সবশেষে নিজ এলাকার কাউন্সিলরের প্রতিস্বাক্ষর কিংবা সুপারিশ নিয়ে জমা দিলেই বয়স্ক ভাতা কিংবা বিধবা ভাতা পাওয়া সম্ভব।

Comments (0)
Add Comment