ফুলে-ফলে রঙিন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ১৭ বিঘা জমি

ফেব্রুয়ারি মাসের তিন দিবসকে সামনে রেখে অর্ধকোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্য

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ফুলের রাজধানীখ্যাত ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে জারবেরা ফুলের। ফুলনগরী খ্যাত কালীগঞ্জে নতুন অতিথি এখন জারবেরা ফুল। শুধু জারবেরাই নয় পাশাপাশি গ্লালোডিয়াস, চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ, ভূট্টা ফুল, লিলিয়াম ও স্ট্রবেরি ফল চাষে নজর কেড়েছে টিপু সুলতানের বাগান। নিজের প্রায় ১৭ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন এই ফুলের বাগান। এই অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানেও পাঠানো হচ্ছে এই ফুল। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ^ ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি ও পহেলা ফাল্গুন এই তিন দিবসকে সামনে রেখে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ফুল বিক্রি করবেন বলে তিনি আশাবাদী। শুধু ফুল বিক্রিই নয় দূর দূরান্ত থেকে অনেকে এই বাগানে আসেন দেখতে। প্রায়ই বিকেলে দর্শনার্থীরা ভিড় জমান ছবি তুলতে আর ফুল কিনতে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের জুন মাসে প্রায় তিন বিঘা জমিতে প্রথম জারবেরা ফুলের বীজ রোপণ করেন ফুলচাষি টিপু সুলতান। বীজ আনা হয় পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। আর ফুল ক্ষেতের ওপর ছাউনি দিতে একই দেশ থেকে আমদানি করা হয় বিশেষ ধরনের পলিথিন। যা তৈরি হয় ইউরোপের দেশগুলোতে। রোপণের তিন মাস পর গাছে ফুল আসতে শুরু করে। একটি গাছ একাধারে দুই থেকে তিন বছর ফুল দেয়। চলতি বছর এই উপজেলার ৩৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুলের চাষ করা হয়েছে। যে কারনে এ এলাকাটি মানুষের কাছে ফুলনগরী বলে পরিচিত। বিদেশি জাতের এই জারবেরা ফুল লাল, সাদা, হলুদ ও গোলাপিসহ ৮টি বাহারি রঙের হয়ে থাকে। তবে এই ফুলের কোনো গন্ধ নেই। বিদেশি জাতের এই ফুলটি ক্ষেত থেকে তোলার পরও ১০ থেকে ১৫ দিন তাজা থাকে। যে কারনে বাজারে এই ফুলের চাহিদা বেশ।
ফুলচাষি টিপু সুলতান জানান, ২০১৬ সালের জুন মাসে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে বীজ সংগ্রহ করে প্রথম ৯৬ শতক জমিতে রোপণ করি। এরপর তিন মাস পর গাছে ফুল আসতে শুরু করে। বীজ রোপণ, ক্ষেতের চারপাশে বাশেঁর বেড়া স্থাপন, ওপরের ছাউনি, সার ওষুধ ও শ্রমিক খরচসহ এ পর্যন্ত ৩৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এই ফুল পরিচর্যা করার জন্য চারজন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে। বর্তমানে ১৭ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ফুল ও ফলের চাষ করছেন।
তিনি আরও জানান, গত ছয় মাসে ১০ লক্ষাধিক টাকার ফুল বিক্রি করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন দেড় হাজার থেকে ২ হাজার ফুল সংগ্রহ করা যাচ্ছে বাগান থেকে। একটি ফুল ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন এই ফুল ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
ফুলচাষি টিপু সুলতান আক্ষেপ করে বলেন, শত চেষ্টা করেও তিনি ফুল বাগানে বিদ্যুতের সংযোগ নিতে পারেননি। যেকারণে তার ফুল চাষ ব্যাহত হচ্ছেন। ফুলগাছে সেচ দিতেও তাকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
কৃষিবিদ ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জারবেরা ফুল চাষের জন্য এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া বেশ উপযোগী। বছরের যে কোনো সময় চাষ করা যায়। শীত মৌসুমে উৎপাদন বেশি হয়। এছাড়া দেশের বাজারে এই ফুলের দাম ও চাহিদা বেশি। তবে এই ফুল লাভজনক হলেও খরচ বেশি হওয়ায় চাষ করতে পারছে না সাধারণ কৃষকরা।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিকদার মোহাম্মদ মোহামেন আক্তার জানান, জার্মান পরিবেশবিদ ডাক্তার ট্রগোট জারবের এর নামানুসারে ফুলটির নামকরণ করা হয়। জারবেরা ফুল চাষের জন্য এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া বেশ উপযোগী। টিপু সুলতান একজন সফল ফুল চাষি। তিনি বিভিন্ন ফুল ও ফলের চাষ করেন। তাকে বিভিন্ন সময়ে উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়া হয়।

Comments (0)
Add Comment