বাঁশের ক্রাচে ভর করে চলে কষ্টের ফেরিওয়ালা রাজীব

 

নজরুল ইসলাম :  শুনেছি সরকার পঙ্গু প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য কত কিছু করে। ভাতা পাচ্ছি । এখন আমার রাজীবের স্বাভাবিক চলাফেরার মত  কেউ যদি কিছু একটা করে দিত তাহলে আমি ছেলে মেয়েগুলো নিয়ে কোন রকমে জীবনটা চালিয়ে নিতাম । কথা হচ্ছিলো চুয়াডাঙ্গার নেহালপুরের রোজিনা খাতুনের সাথে । ছেলে বছর আঠারোর রাজীব । শিশু বয়সে যে হারিয়েছে স্বাভাবিক চলনশক্তি । বাঁশের তৈরী ক্রাচে ভর করে চলতে কষ্টের ফেরিওয়ালা রাজিবকে। জন্মের পর থেকেই  সংগ্রাম, কখনো নিজের সাথে, কখনো পরিবারের সাথে, কখনো আশপাশের মানুষের সাথে। শত দুঃখ কষ্টের মাঝেও মুখভরা হাসি । অবশ্য  শারিরিক কারণে মানসিক অনুভুতিও হারিয়ে গেছে কিছুটা ।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়নের নেহালপুর পূর্বপাড়ার দিনমজুর শফিকুলের ছেলে রাজিবুল ওরফে রাজিব (১৮)। মা রোজিনা বেগম গৃহিনী, ছোট বোন শরিফা খাতুন গ্রামের স্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী ও ছোট ভাই আবির হাসান (৬) একই স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র। আড়াই কাঠা জমির ওপর একটি টিনের ছাপড়ায় তাদের বসবাস। রোজিনা বেগম জানান, রাজিবের বয়স যখন ২১ দিন তখন এক দুপুরে হঠাৎ ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় চিৎকার দিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে সে । নেয়া হয় পল্লীচিকিৎসকের নিকট। ডাক্তার জানায় রাজিবের নিউমোনিয়া হয়েছে দিতে হবে ইনজেকশন । বাবা মার সন্মতিতে চিকিৎসা শুরু করে ডাক্তার। কোন কিছুতেই কিছু হয়না । রাজিব বড় হতে থাকলেও পায়ে হেঁটে চলার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে । সারাক্ষণ বিছানাই শুয়ে দিন কাটে তার। চিকিৎসার হাল ছেড়ে দিয়ে কবিরাজি চিকিৎসা শুরু হয়। পরে হুইল চেয়ার কিংবা বাঁশের তৈরী ক্রাচে করে চলাফেরা করতে সক্ষম হয় রাজিব। সেই থেকে বাঁশের ক্রাচের ওপর ভর করে তার পথচলা । শরীর সাড়া দিলে রোজগারের খোঁজে বের হয় জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে। শত দুঃখ কষ্টের মাঝেও তার মুখে হাসি লেগে থাকে সব সময়। জিজ্ঞাসা করলে সে মিষ্টি হেসে জানায় , আমার কোন কষ্ট নেই। একটা চার্জার গাড়ি হলে নিজের মত করে চলতে পারতাম। রাজিবের মা রোজিনা খাতুন বলেন, এতো করে নিষেধ করি বাইরে যাবার দরকার নেই। কোন কথা শোনে না। স্পষ্ট করে সব কথা না বলতে পারলেও বোঝে সবই। স্বপ্ন দেখে ,বাবাকে সাহায্য করা এবং ছোট ভাইবোনকে লেখাপড়া শেখানো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রোজিনা বলেন, যে ভাবেই হোক ছেলেটা যে বেঁচে আছে এতেই আমি খুশি। ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন জোয়ার্দ্দার বলেন, রাজিবের একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেয়া হয়েছে। হুইল চেয়ারটা ভেঙ্গে গেছে আরেকটা  হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

 

Comments (0)
Add Comment