বেপরোয়া গতির ট্রাক্টর থেকে মাটি পড়ে রাস্তাঘাটের অবস্থা নাজুক 

চুয়াডাঙ্গার গড়াইটুপিতে পুকুর খননের নামে ইটভাটায় মাটি বিক্রির অভিযোগ

লাবলু রহমান: মাটির ওপরের হিউমাসযুক্ত বালুকায় স্তরটিকে টপ সয়েল বলে। আরো ভালো করে বলতে গেলে মাটির উপরের সেই অংশ যেখানে গাছপালা জন্মে অর্থাৎ মাটির উপরের উর্বর অংশ হল টপ সয়েল। টপ সয়েল না থাকলে কোনো গাছপালা বা শস্য জন্মাবে না। শস্য উৎপাদন টপ সয়েলের ভূমিকা তাই অপরিসীম।কিন্তু অর্থের লোভে একশ্রেণীর ভূমিদস্যুরা এই কাজে লিপ্ত রয়েছে। আর প্রতিরোধ্য হিসেবে তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। কিছু অসাধু মাটি ব্যবসায়ী কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এসব জমির টপ সয়েল কিনে নিচ্ছেন। বলা হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দর্শনা থানার অন্তর্ভুক্ত গড়াইটুপি ইউনিয়নের কথা। ইউনিয়নের বেশ কয়েক জায়গায় ভূমি দস্যুদের দৌরাত্ম্য চরমে পৌঁছেছে। ধানী জমির টপ সয়েল এক্সেভের দিয়ে কেটে পুকুর খননের নামে ইটভাটায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। আর মাটিবাহী এই বেপরোয়া গতির প্রতিযোগিতামূলক ট্রাক্টরের চলাচলে গাড়ি থেকে মাটি পড়ে এলাকার রাস্তাঘাট অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। হালকা বৃষ্টির পানিতে ঘটছে দুর্ঘটনা। ঠিক পাকা রাস্তা অনেকটা কাঁচা রাস্তায় পরিণত হয়েছে। এলাকার সাধারণ জনগণ ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। তারা নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক একজন জানান, স্থানীয় ভূমি অফিসে জানালে তারা এসে বন্ধ করলেও অদৃশ্য কারণে পুনরায় মাটি বিক্রির ধূম বয়ে যায়। ধানী জমির টপ সয়েল পর্যন্ত গিলছে ইটভাটাগুলো। ফলে আবাদি জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে নগরায়ন গড়তে ইট প্রস্তুত করা সাংঘর্ষিকে রুপ নিয়েছে।

সরেজমিনে এলাকা ঘুরে জানাগেছে, কিছু রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় কিছু মাটি ব্যবসায়ী প্রতি বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত মাটির ব্যবসা করেন। তারা কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে জমির মাটি কিনে নিয়ে চড়া দামে ইটভাটায় বিক্রি করেন। এছাড়া বাড়ি তৈরিতে মাটি ভরাট প্রয়োজন হলেও অনেকে এসব মাটি ব্যবসায়ীর দ্বারস্থ হন। অল্প সময়েই মাটি ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা রোজগার করেন। গতকাল শনিবার গড়াইটুপি ইউনিয়নের সড়াবাড়ীয়া-গহেরপুর সড়কের পাশে সড়াবাড়ীয়া গ্রামের মৃত আমির মল্লিকের ছেলে ফরহাদ হোসেন ধানী জমিতে পুকুর খননের নামে টপ সয়েলসহ অবশিষ্ট মাটি পার্শ্ববর্তী ইটভাটায় বিক্রি করছেন। তবে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানান, ভাটা মালিকের সাথে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রি বাবদ ৪ লাখ টাকায় চুক্তি করেছেন। গত মরসুমে তিনি ধান চাষ করেন। তবে ফরহাদ হোসেন বলেন, জমিতে চাষ হয় না। একই ইউনিয়নের বাটিকাডাঙ্গা গ্রামের ভোমরাডাঙ্গা সড়কের পাশে একই গ্রামের আশরাফ মাস্টারের ছেলে জুয়েল হোসেন পুকুর পুনঃখননের নামে ৮শ টাকা গাড়ি প্রতি মাটি বিক্রি করছেন। তিনি তা স্বীকার করেন। ইউনিয়নের খাসপাড়া গ্রামের জৈনক ব্যক্তি বাড়ির পাশে দাড়ের মাঠের আবাদি জমিতে পুকুর খনন করলেও মাটি যাচ্ছে ভাটায়।

 এদিকে গড়াইটুপি টু বিত্তিরদাড়ি সড়কের ব্রিজের সন্নিকটে স্থানীয় যুবলীগ নেতা ও মাটি ব্যবসায়ী মিলে ব্রিজের সামনে আওলাদ বিশ্বাসের পুকুর কেটে মাটি ও বালু বিক্রি করেছেন। ওই সড়কে ট্রাক্টর থেকে মাটি পড়ে বৃষ্টির কারণে গত কয়েকদিন আগে একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। কিন্তু তাতে কোনো হতাহত হয়নি। এছাড়াও গহেরপুর টু বাটিকাডাঙ্গা সড়কের ২য় ব্রিজের সামনে পুকুর খনন করা হয়েছে।এতে পানি চলাচলে স্বাভাবিক পথ বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং প্লাবিত হবার আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী। এছাড়াও কামরিয়ার বিলের পুকুর পুনঃ খননের নামে মাটি বিক্রি হয়েছে।

Comments (0)
Add Comment