লজ্জা আর ঘৃণায় করোনা আক্রান্ত রাজ্জাকের আত্মহত্যা

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার গড়গড়ি ঘোষপাড়ায় করোনা আক্রান্ত এক গরু ব্যবসায়ী আত্মহত্যা করেছেন। গত শনিবার দিনগত ভোরে নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। নিহত আবদুর রাজ্জাক গড়গড়ি গ্রামের সাহাজ উদ্দিন ম-লের সেজ ছেলে। তিনি পেশায় একজন গরু ব্যবসায়ী ছিলেন। গত ১৬ জুন করোনা শনাক্ত হওয়ায় হতাশা লজ্জা ও ঘৃণায় সে গালায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে এলাকাবাসী জানান। গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
জানা গেছে, আবদুর রাজ্জাক সম্প্রতি ঠা-া জ্বরে আক্রান্ত হলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। পরীক্ষা করা হলে গত ১৬ জুন তার করোনা পজেটিভ আসে। ডাক্তারের পরামর্শে ১০ দিনের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে তিনি বাড়িতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৭ জুন জেহালা ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার বাড়ির সামনে লাল পতাকা টানিয়ে বাড়িটি লকডাউন করে দিয়ে আসে। সেই থেকে বাড়ির একটি ছোট্ট কামরায় থাকতেন তিনি। পারিবার ও প্রতিবেশীদের কাছে থেকে একা একা ঘরে হতাশা, লজ্জা ও ঘৃণায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তিনি। গতপরশু শনিবার ভোর রাতে নিজ ঘরের আড়ায় রশির ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের এসআই খসরুল আলম লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট করেন। দাফনে সহযোগিতায় ছিলেন চুয়াডাঙ্গা ইসলামী ফাউন্ডেশনের কেয়ারটেকার হাফেজ মাওলানা ওমর ফারুক, মাওলানা আলামিন হোসেন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক মাওলানা আনিছুর রহমান। বেলা ১১টার দিকে গ্রামের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। মৃত আবদুর রাজ্জাক ৭ ভাইয়ের মধ্যে সেজো ছিলেন ও এক সন্তানের জনক ছিলেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আবদুর রাজ্জাকের স্ত্রী ময়না খাতুন জানান, করোনা শনাক্ত হওয়ার পর আমার স্বামী মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়ে। কিন্তু সে শারীরিকভাবে সুস্থই ছিলো। সে আলাদা ঘরে ছিল ঠিকই কিন্তু সব সময় দেখভাল করছিলাম। ভোরেও তার কাশির শব্দ শুনতে পাই। কিন্তু সকালে তাকে ডাকতে গিয়ে দেখি ঘরের আড়ায় ফাঁস দিয়ে সে ঝুলছে।
জেহালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল হক রোকন জানান, করোনা শনাক্ত হলে ১৭ জুন তার বাড়িতে লাল পতাকা টানিয়ে দেয়া হয়। গত (রোববার) সকালে তার আত্মাহ্যার খবর পেয়ে আমি তার বাড়িতে যাই এবং তুলিশে খবর দিই। আমার ধারণা গরু ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার কারণে লজ্জা ও ঘৃণায় আত্মহত্যা করেছে।
এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা থানার ওসি আলমগীর কবীর জানান, আবদুর রাজ্জাক করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে এসে নিজ বাড়িতেই আইসোলেশন চিকিৎসাধীন ছিলেন। শ্বাসকষ্ট ও পরিবার থেকে আলাদা থাকাটা মেনে নিতে না পেরে আত্মহত্যা করে। এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

Comments (0)
Add Comment