সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাশ করা প্রয়োজন

জীবনঘাতী তামাক থেকে দেশের জনগণকে সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাশ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিশ্বসাহিত্য ‘তরুণ-তরুণী, নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার গুরুত্ব’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে নারী মৈত্রী এ সেমিনারের আয়োজন করে।

উপদেষ্টা আরও বলেন, তামাকজনিত কারণে প্রতিদিন ৪৪২ জনের প্রাণ যাচ্ছে, এতো মহামারী। একটা রাষ্ট্র এতটা উদাসীন হতে পারে না। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাস নিয়ে সরকারের মধ্যে যে দ্বিমত আছে তা খন্ডন করতে হবে। এই সংশোধনী পাস না হলে আমাদেরকেও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

সেমিনারে জানানো হয়, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ (সংশোধীত ২০১৩) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল এফসিটিসি-এর সাথে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বেশ কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব করে। তার মধ্যে গুর“ত্বপূর্ণ প্রস্তাবনাগুলো হল- পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বা স্মোকিং জোন নিষিদ্ধ করা, সকল ধরনের তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন ও বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরণ-তরণীদের রক্ষা করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের সচিত্র সতর্কবার্তা বৃদ্ধি করে শতকরা ৯০ ভাগ করা ।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ’ খসড়াটি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করা হয়। সেই বৈঠকে খসড়াটি পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত করার জন্য অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি উ”চক্ষমতাসম্পন্ন উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়। কিন্ত সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে বিষয়টি পর্যালোচনার নামে পরিণত হয়েছে তামাক কোম্পানির সঙ্গে দর কষাকষিতে।

এ প্রসঙ্গে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, আন্তর্জাতিক চুক্তি এফসিটিসির ৫.৩ ধারা বলা হয়েছে, তামাক কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বার্থ থেকে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা রাখতে হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পারছি যে, বর্তমান সরকার তামাক কোম্পানির সাথে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। তাই অবিলম্বে সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। তিনি আরো বলেন, ইদানিং দেখা যাচ্ছে টোব্যাকো পলিটিক্স শুরু হয়েছে। আমাদের এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে।

নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি সভাপতিত্বে সেমিনারে অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শবনম মোস্তারী ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মো. আখতারউজ-জামান।