স্বামী-শাশুড়ীর নির্যাতনে গৃহবধূর মৃত্যু

স্বজনদের দাবি ঘটনার সময় লিখিত অভিযোগ আমলে নেয়নি পুলিশ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: দুই সপ্তাহ ধরে বেঁচে থাকার সকল আয়োজনকে ব্যর্থ করে মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন গৃহবধূ মীম। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবির পরিচর্যায় (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেন নিহতের পিতা মিরপুর উপজেলার কামিরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. মহিবুল আলম।

একমাত্র কন্যা সন্তান তাসমীম আক্তার মীমের ৪ বছর আগে কলেজে পড়ার সময় নিজের পছন্দেই বিয়ে হয়েছিলো দৌলতপুর উপজেলার তাড়াগুনিয়া গ্রামের মৃত. জিন্না মোল্লার ছেলে এজাজ আহমেদ বাপ্পীর সাথে। সেখানেই গত ১ সেপ্টেম্বর শ্বশুরবাড়িতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে গুরুতর আহত হন তিনি। সেখান থেকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। গত ২ সেপ্টেম্বর সকালে ভর্তির পর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে জানালেন নিহতের পিতা মহিবুল আলম। মহিবুলের অভিযোগ, ‘ঘটনার পরই দৌলতপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ নিয়ে গেলে উল্টো পুলিশ বলে আপনার মেয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে, এসবের কোনো মামলা হয় না, এখানে পুলিশের কিছু করার নেই’।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে, নিজেরাই পছন্দ করে বিয়ে করার ফলে বিয়ের পর থেকেই মীমের শাশুড়ী কোহিনুর বেগম ছেলের স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করতে শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টার দিকে স্বামী এজাজ আহমেদ বাপ্পি এবং শাশুড়ি কোহিনুর বেগম মিলে মীমের ওপর নির্যাতন শুরু করেন। এক পর্যায়ে মীম বে-হুশ হয়ে পড়ে। এসময় মা-ছেলে মিলে অচেতন মীমকে ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝোলানোর চেষ্টাকালে আকস্মিকভাবে মীম জ্ঞান ফিরে পায় এবং পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বাঁচার আকুতিতে সাহায্য চেয়ে চিৎকার করে উঠে। মীমের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে মীমকে ফ্যানের সাথে ঝুলতে দেখে। লোক জড়ো হওয়ায় পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বাপ্পী ও মা কোহিনুর বেগম পালিয়ে যান। এসময় স্থানীয়রা দ্রুত মীমকে উদ্ধার করে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন।

দৌলতপুর থানার ওসি জহুরুল আলম জানান, তাসনীম মীম নামের গৃহবধূ মৃত্যুর ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিলো গত ১ সেপ্টেম্বর। আমি মাত্র দু’দিন হলো এখানে যোগদান করেছি। ওই সময় নিহতের পিতার দেয়া অভিযোগের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। পুলিশ অভিযোগ পেয়েও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি এমন অভিযোগের সত্যতা পেলে সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিহতের পিতাকে এজাহার দিতে বলেছি, দাফন সম্পন্ন করে এজাহার নিয়ে আসার কথা। এজাহার পেলে মামলা রুজুসহ ন্যায় বিচারের জন্য আইনগত যা কিছু করার আছে সবই করবে পুলিশ।

 

Comments (0)
Add Comment