স্মৃতির মশাল হাতে চুয়াডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের ‘নভেম্বরের নক্ষত্র’ সহিদুল বিশ্বাস: এক ন‌া‌ম, এক ইতিহাস

স্টাফ রিপোর্টার: নভেম্বর মাস যেন চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ (চুসাপ)-এর সদস্যদের কাছে বেদনার এক প্রতিচ্ছবি। এই মাসেই পরিষদের বেশ ক’জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য চিরবিদায় নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শফিউদ্দীন (মৃত্যু ২৪ নভেম্বর), অ্যাড. ইউনুছ আলী (মৃত্যু ৫ নভেম্বর), সাইফুল ইসলাম পিনু (মৃত্যু ৯ নভেম্বর), সহিদুল ইসলাম বিশ্বাস (মৃত্যু ১১ নভেম্বর), রিচার্ড রহমান (মৃত্যু ১২ নভেম্বর), মাবুদ মালিক (মৃত্যু ১৪ নভেম্বর) এবং অমিতাভ মীর (মৃত্যু ২২ নভেম্বর)।

এক মানবিক সাংসদের স্মৃতিচারণ
১১ নভেম্বর। চুসাপ-এর সুপ্রিয় সদস্য সহিদুল ইসলাম বিশ্বাস-এর প্রয়াণ দিবস। ২০০৬ সালের এই দিনে তিনি তাঁর রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মযজ্ঞের ইতি টেনে চলে যান। স্বাধীনতা পরবর্তী চুয়াডাঙ্গার রাজনৈতিক উত্থান-পতনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ‘সহিদুল ভাই’-এর জীবন ও কর্মের ইতিহাস। তাঁর এই ইতিহাসকে বিস্মৃত হওয়া মানে কেবল একজন মহৎ ব্যক্তিকে ভুলে যাওয়া নয়, বরং একটি ঘুণে ধরা সমাজের বড় ক্ষতি সাধন করা, যা দিনবদলের স্বপ্নে বিভোর সাধারণ মানুষের জন্য বড় ধাক্কা। “মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য”- এই বোধকে কেন্দ্র করেই তাঁর যাবতীয় সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞকে তিনি সাজিয়েছিলেন সাধারণ মানুষের কল্যাণে।যিনি হয়ে উঠেছিলেন অসাধারণ
সাধারণ মানুষের জন্য সহিদুল ইসলাম বিশ্বাস কী করেছেন, সেই পরিমাপে না গিয়েও বলা যায়— তিনি ছিলেন সাধারণের মাঝে একজন অসাধারণ মানুষ। জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত সাংসদ হয়েও তাঁর ব্যক্তি মাধুর্য এতই প্রবল ছিল যে তাঁকে কখনো ‘আলাদা জগতের মানুষ’ মনে হয়নি। তাঁর রাজনীতি ছিল আমজনতাকে কেন্দ্র করে। এই মানবকল্যাণমুখী শ্রেয়োবোধের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল তাঁর ছাত্রজীবনের প্রগতিশীল রাজনীতি ও পরবর্তীতে ন্যাপ (ভাসানী)-এর সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরও যৌবনের প্রথম এই ‘রাজনৈতিক-প্রেম’ তিনি কখনো ভোলেননি।
ভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ছিল এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। সাধারণ মানুষের কল্যাণে শতভাগ সফল না হলেও, সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর চেষ্টায় তাঁর কোনো ত্রুটি ছিল না।
সহিদুল ইসলাম বিশ্বাস ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের একজন জীবন সদস্য। রাজনৈতিক ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও তিনি মাঝে মাঝে পরিষদে আসতেন। কিন্তু তিনি সেখানে শুধুমাত্র একজন সাংসদ বা রাজনীতিবিদ পরিচয়ে আসতেন না। পরিষদের আঙিনায় তাঁকে শার্ট খুলে কোমরে বেঁধে গেঞ্জি গায়ে দরমুজ দিয়ে মাটি সমান করতেও দেখা গেছে! জনপ্রতিনিধি পরিচয়ের ভার ভুলে গিয়ে সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি তাঁর এমন নিবেদন সত্যিই বিরল।
দায় মেটানোর আহ্বান
কিছু ব্যক্তির শারীরিক মৃত্যু হলেও তাঁদের আদর্শ থাকে অবিনশ্বর। সহিদুল ইসলাম বিশ্বাস তাঁর আদর্শ থেকে আলাদা নন। তাই ‘সহিদুল ভাই’-এর শারীরিক অনুপস্থিতিতেও তাঁর প্রতি ভালোবাসা থেকেই আড্ডা, আলোচনা এবং স্মরণানুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর ব্যক্তি ও কর্মজীবনের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে।
‘সহিদুল ভাই’-এর স্বচ্ছল পরিবারের উত্তরাধিকারীদেরই এই ইতিহাস সংকলন করার প্রধান দায়ভার নিতে হবে। অন্যরা সহায়তা করতে পারেন। ইতিহাস হয়ে তিনি রয়েছেন আমাদের হৃদয়ে, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রেরণা হয়ে থাকবে।