রহমান মুকুল: সাম্প্রতিক সময়ে আলমডাঙ্গায় কয়েকটি অপরাধ দমনে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানে এলাকায় দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। মাদকবিরোধী অভিযানে একের পর এক গ্রেফতার, চাঁদাবাজি প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপ দমনে কঠোর নজরদারি-সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। তবুও পুলিশ মনে করছে, দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের জন্য জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য। এ প্রেক্ষাপটেই সম্প্রতি আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমান-পিপিএম এই প্রতিবেদকের সামনে এক আন্তরিক ও দৃঢ় আহ্বান জানান-“চাঁদাবাজি, মাদক ও সন্ত্রাস এগুলো কেবল আইন ভঙ্গ করে না, ভেঙে দেয় মানুষের নিরাপত্তাবোধ, নষ্ট করে সামাজিক সম্প্রীতি, ধ্বংস করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্ন।” তিনি বলেন, শুধু পুলিশের তৎপরতা যথেষ্ট নয়; অপরাধ দমনে জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। “অপরাধীরা তখনই সাহস পায়, যখন দেখে জনগণ নীরব বা নির্লিপ্ত। কিন্তু জনগণ যদি সঠিক সময়ে ‘না’ বলে, তাহলে অপরাধ টিকতে পারবে না,” মন্তব্য করেন তিনি। মাদককে ‘নীরব হত্যাকারী’ আখ্যা দিয়ে ওসি মাসুদুর রহমান বলেন, “এটি ধীরে ধীরে আমাদের সন্তানদের ধ্বংস করছে। পরিবারে অশান্তি, সমাজে অস্থিরতা সব কিছুর পেছনে মাদকের হাত আছে। প্রতিটি অভিভাবক, শিক্ষক, সামাজিক নেতা এবং সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।” চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এগুলো শুধু অর্থ বা সম্পদের ক্ষতি ঘটায় না, মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করে-যা উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে বড় বাধা। “যেখানে ভয়ের পরিবেশ বিরাজ করে, সেখানে বিনিয়োগ, শিক্ষা, সংস্কৃতি কোনোটাই বিকশিত হয় না,” যোগ করেন তিনি। জনগণের প্রতি তার প্রত্যাশা, প্রতিটি পাড়া-মহল্লা, বাজার ও গ্রামে অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। “আপনার একটি ফোনকল বা সঠিক তথ্য পুলিশের কাজে নতুন দিক খুলে দিতে পারে। আপনার সচেতনতা একজন যুবককে মাদক থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে, একটি পরিবারকে রক্ষা করতে পারে, একটি জীবন বাঁচাতে পারে। আসুন, আমরা সকলে মিলে অপরাধকে “না” বলি।” তিনি আহ্বান জানান, কেউ যেন ভয়ে বা লজ্জায় অপরাধ গোপন না করে। বরং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাহসী ভূমিকা গ্রহণ করাই হবে একজন নাগরিকের সত্যিকারের দায়িত্ব। “আলমডাঙ্গা হবে তখনই নিরাপদ, যখন প্রতিটি নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিজের অংশটুকু পালন করবে,” তিনি বলেন। ওসি’র এই বক্তব্য শুধু প্রশাসনিক ঘোষণা নয় এটি একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের পক্ষ থেকে আরেকজন নাগরিকের প্রতি মানবিক আবেদন, যার লক্ষ্য একটাই-একটি শান্তিপূর্ণ, মাদকমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত আলমডাঙ্গা গড়ে তোলা, যেখানে ভয়ের বদলে থাকবে আস্থা, বিভেদের বদলে জন্ম নেবে ভালোবাসা ও শান্তি। এমনটাই প্রত্যাশা জনসাধারণের।