অসুস্থ ছেলের ওষুধ কিনে বাড়ি ফেরা হলো না মায়ের

স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘদিন যাবত ছোট ছেলে নাঈম উদ্দিন অসুস্থ। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে দেয়া একটি ওষুধ সচারাচর পাওনা যায় না। জেলা শহরের ফার্মেসি থেকে চুক্তিবদ্ধ করে বাইরে থেকে নিয়ে আসতে হয়। আর সেই ওষুধ নিয়ে চুয়াডাঙ্গা থেকে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় আছিয়া খাতুনের (৪৫) করুণমৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। গতকাল রাতেই আছিয়া খাতুনের মরদেহ দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
গত সোমবার (২৯ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে দামুড়হুদা ব্র্যাক অফিসের সামনে আপন ব্রিকসের ইট বহনকারী ট্রাক্টর একটি ইজিবাইককে ধাক্কা দেয়। এতে ইজিবাইক চালক আমির হোসেন ও যাত্রী আছিয়া খাতুন গুরুতর জখম হন। পরে স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। আছিয়া খাতুনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক রাজশাহীতে রেফার করেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নিহত আছিয়া খাতুন দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের স্কুলপাড়ার কলিমউদ্দিনের স্ত্রী ও আহত ইজিবাইক চালক আমির হোসেন একই উপজেলার দর্শনা মোবারকপাড়ার মৃত কবির খার ছেলে।
উদ্ধারকারী ব্র্যাক স্বাস্থ্যকর্মী সেলিনা খাতুন মাথাভাঙ্গাকে বলেন, গত সোমবার (২৯ মার্চ) সকালে দামুড়হুদা ব্র্যাক অফিসের সামনে একটি ইট বহনকারী ট্রাক্টর ইজিবাইকটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ইজিবাইক উল্টে চালক ও আছিয়া খাতুন গুরুতর জখম হন। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নিহত আছিয়ার স্বামী কলিমউদ্দিন বলেন, আমার ছোট ছেলে দীর্ঘদিন যাবত মাথার (ব্রেন) সমস্যায় ভুগছে। চিকিৎসকের দেয়া একটি ওষুধ সচারাচর পাওয়া যায় না। বাইরে থেকে অর্ডার দিয়ে নিয়ে আসতে হয়। গত সোমবার সেই ওষুধ নিতে আমার স্ত্রী আছিয়া খাতুন তার বাবার বাড়ি দামুড়হুদা পুড়াপাড়া থেকে চুয়াডাঙ্গায় যায়। কিন্তু ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরলো ঠিকই, কিন্তু লাশ হয়ে, এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তিনি আরও বলেন, আমার দুই ছেলে। কোনো মেয়ে নেই। মাকে হারিয়ে দুই ছেলে যেন পাগলপ্রায়। এদিকে আহত অবস্থায় আছিয়া খাতুনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে স্থানীয়রা। সে সময় অনেক খোঁজাখুঁজির পরও আছিয়ার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। হাসপাতালে থাকা অন্যান্য রোগীর স্বজনরা, স্থানীয় সংবাদকর্মী, পুলিশ সদস্যসহ স্বেচ্ছাসেবীরা আছিয়া খাতুনের পাশে এগিয়ে আসেন। পরে সন্ধ্যার পর আপন ব্রিকস ইটভাটা মালিকের পক্ষ থেকে আছিয়া খাতুনকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরদিন সকালে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
গতকাল রাতে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে আছিয়া খাতুনের মরদেহ তার গোবিন্দপুর গ্রামের শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে। সকলেই অশ্রুসিক্ত নয়নে এক নজর তাকে দেখতে ভিড় করে। পাড়া- প্রতিবেশী ও পরিবারের লোকজনের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে আকাশ বাতাস। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে গোবিন্দপুর গ্রাম্যকরবস্থানে আছিয়া খাতুনের মরদেহ দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করে পরিবারের সদস্যরা।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মাহবুবুর রহমান মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আছিয়া খাতুনের মাথার ছামড়া ছিড়ে ঘিলু বের হয়ে গেছে। এছাড়াও একটি ছোট উপড়ে গেছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছিল।আহত ইজিবাইক চালক আমির হোসেন শঙ্কামুক্ত। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
দামুড়হুদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল খালেক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, সোমবার সকালে দামুড়হুদা ব্র্যাক অফিসের সামনে ট্রাক্টর-ইজিবাইক সংঘর্ষ হয়। এতে আছিয়া খাতুন নামের এক নারী গুরুতর জখম হন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে রাজশাহীতে নেয়া হয়। গতকাল সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি নিহতের পরিবারের সাথে কথা বলেছি। তাদের কোন অভিযোগ না থাকায় মরদেহ দাফনের জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে।

Comments (0)
Add Comment