আলমডাঙ্গার আইলহাসের হাসিবুল হত্যা মামলা পিবিআইয়ে হস্তান্তর

স্টাফ রিপোর্টার আলমডাঙ্গার আইলহাস গ্রামের মুদি দোকানি হাসিবুল হত্যাকা-ের দু’বছরেও উম্মোচন হয়নি হত্যার রহস্য। কি কারণে হাসিবুল হত্যাকা-ের শিকার হলেন সে ব্যাপারে যেমন পুলিশ কোনো তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি তেমনই ধরা পড়েনি মূলহোতা। জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে ধরা হলেও তাদের কাছ থেকে রহস্য উম্মোচনে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। থানা পুলিশ হত্যার রহস্য উম্মোচন ও মূলহোতাকে গ্রেফতারে ব্যর্থ হলে মামলার তদন্তভার দেয়া হয় পিবিআইকে। এদিকে, সুষ্ঠু বিচারের আশায় পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন হাসিবুল ইসলামের মা, স্ত্রী ও শিশু সন্তান। জড়িতদের খুঁজে বের করে রহস্য উম্মোচন ও ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাস গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে মুদি দোকানি হাসিবুল ইসলামকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই রাতে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরদিন ২০ জুলাই সকালে গ্রামের পার্শ্ববর্তী হোসেনপুর-ঘোলদাড়ি গ্রামের মাঠ থেকে হাসিবুলের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরকীয়ার জের ধরে হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে বলে সে সময় প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হলেও আজও তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। হাসিবুল কেন খুন হলো এ প্রশ্নের সুষ্পষ্ট জাবাব মেলেনি আজও। ঘটনার পর আলমডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রামেরই আব্দুল বারেকের ছেলে লিটন হোসেন, সাহাবুদ্দিনের ছেলে আব্দুল হাকিম, মোয়াজ্জেমের ছেলে মিলন হোসেন ও পার্শ্ববর্তী শিশিরদাড়ি গ্রামের আব্দুল ওহাবের ছেলে শিমুল হোসেনকে আটক করে পুলিশ। তবে তাদের কাছ থেকে হত্যার রহস্য উম্মোচন করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে তারা জামিনে মুক্ত আছেন।
এদিকে, একমাত্র ছেলে হারিয়ে পাগলপ্রায় হাসিবুল ইসলামের মা সাজেদা খাতুন ও পিতা আব্দুল কুদ্দুস। স্বামীকে হারিয়ে যেমন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্ত্রী হিরা খাতুন, তেমনি পিতাকে হারিয়ে নির্বোধ শিশু হামিম। সন্তান হত্যার বিচারের আশায় পুলিশ ও পিবিআই কর্মকতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মা সাজেদা খাতুন, স্ত্রী হিরা খাতুন। তাদের সাথে শিশু সন্তান হামিমও।
হাসিবুলের মা সাজেদা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ছেলেকে হারিয়েছি দু’বছর হলো। তাকে তো আর ফিরে পাবো না। কিন্তু আমার কলিজার টুকরো ছেলেকে যারা মেরে ফেলেছে তাদের শাস্তি হোক। আমি তাদের ফাঁসি দেখতে চাই। অন্তত ছেলের হত্যাকারীদের শাস্তি হলেও নিজেকে কিছুটা সান্তনা দিতে পারবো। তিনি আরও বলেন, পুলিশ আজও আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারেনি। জানি না হত্যার সুষ্ঠু বিচার পাবো কি না। ছেলেকে হারিয়েছি, ছেলের হত্যাকারীদের শাস্তি দেখে যেতে না পারলে যে মরেও শান্তি পাবো না।
হাসিবুলের স্ত্রী হিরা খাতুন জানান, আমার স্বামীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হলো। হত্যাকা-ের দুই বছর হয়ে গেলো কিন্তু মূল আসামি গ্রেফতার হলো না। স্বামী হত্যার বিচারের আশায় শাশুড়ি ও শিশু সন্তানকে সাথে নিয়ে কখনও পুলিশ কখনও সাংবাদিকদের কাছে ধরনা দিয়েছি। দিনের পর দিন পুলিশ অফিসে গিয়েছে। হত্যাকা-ের রহস্য উম্মোচন করে আসামিদের শাস্তি দাবি জানিয়েছেন তিনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঝিনাইদহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ইন্সেপেক্টর আমীর আব্বাস জানান, পুলিশের কাছ থেকে মামলার নেয়ার পর আমরা মূলহোতাকে গ্রেফতারে বেশকয়েকটি অভিযান চালিয়েছি। এছাড়া হাসিবুল হত্যাকা-ের পর থেকে গ্রামেরই শুকুর আলী ওরফে শুক্রর ছেলে আফিল উদ্দিন পলাতক রয়েছেন। তিনি এ হত্যাকা-ের সাথে জড়িত থাকতে পারে। তাকে ধরতে পারলেই হত্যাকা-ের আসল রহস্য উম্মোচন করা সম্ভব হবে। তিনি আরও জানান, আফিলকে ধরতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে এবং এখনও অব্যাহত রয়েছে। খুব দ্রুত তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

Comments (0)
Add Comment