আলমডাঙ্গার জেহালার কামাল হত্যায় ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব হেফাজতে ৪ : প্রধান আসামিসহ পলাতক ৭
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার জেহালার বিশিষ্ট ঠিকাদার বিএনপি নেতা কামাল হোসেন হত্যাকান্ডের ৪ এজাহারনামীয় আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ি থেকে নিয়ে গেছে র‌্যাব। প্রধান আসামিসহ ৭ আসামি রয়েছেন পলাতক। মঙ্গলবার রাতে তাদেরকে ঝিনাইদহ র‌্যাব-৬ ক্যাম্পে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রাখা হয়েছে। উপরোক্ত তথ্য জানিয়ে আলমডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল আলিম জানান, বুধবার রাতেই র‌্যাব তাদেরকে থানায় হস্তান্তর করতে পারেন। গতকাল বুধবার নিহতের স্ত্রী সেলিনা আক্তার বাদী হয়ে ১১ জনকে আসামি করে আলমডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আটককৃতরা সকলেই এজাহারভুক্ত আসামি।
জানা যায়, ঝিনাইদহ র‌্যাব অভিযান চালিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে আলমডাঙ্গা পৌর এলাকা থেকে হারদী গ্রামের ওবাইদুল ইসলাম খানের ছেলে সাজ্জাদুল ইসলাম স্বপন (৪৭), মুন্সিগঞ্জের মৃত আলাউদ্দীনের ছেলে রফিক, মৃত আলফাজের ছেলে বিমান ও তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে তরিকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। মঙ্গলবার নিহত কামাল হোসেনের স্ত্রী সেলিনা আক্তার বাদী হয়ে ১১জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
এজাহারে উল্লেখিত অন্য আসামিরা হলেন প্রধান আসামি মুন্সিগঞ্জের মৃত মোতাহার হোসেনের ঘরজামাই ও বামানগর গ্রামের কাশেম আলীর ছেলে স্বাধীন, মুন্সিগঞ্জের মৃত সিদ্দিক মিয়ার দুই ছেলে সালাউদ্দীন ও আব্দুস সাত্তার, মৃত মোতাহার আলীর স্ত্রী ইসমাতারা বিউটি, মৃত ঈমান আলীর মেয়ে সাইমা নিগার, মৃত ঈমান আলীর ছেলে তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে কামাল হোসেনের সাথে মুন্সিগঞ্জের মৃত মোতাহার হোসেনদের জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিলো। সে বিরোধ এখন আদালতে। ৫ ও ৬নং আসামি যথাক্রমে সালাউদ্দীন ও আব্দুস সাত্তার দুই ভাই লন্ডন প্রবাসী। তাদের মদদে, ষড়যন্ত্রে ও অর্থে ৭নং আসামিকে দিয়ে কামাল হোসেনকে হত্যা করানো হয়েছে। ঘটনার রাতে ১নং আসামি স্বাধীন ও স্বপন রাত ১০ টার দিকে কামাল হোসেনকে বাড়ি থেকে কথা আছে বলে ডেকে নেন। পরে তাকে স্বাধীনের শ্বশুরবাড়ির সামনে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে রেখে যায়। মোস্ত নামের এক অটোচালক দেখে কামাল হোসেনের বাড়িতে সংবাদ দেন। পুলিশ প্রথমে উদ্ধার করে স্থানীয় ক্লিনিকে ও পরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
সেলিনা আক্তার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কামাল হোসেন তাকে ক্ষীণ কন্ঠে জানিয়েছিলেন স্বাধীন, রফিক, স্বপন, স্বাধীনের বউ, শ্বাশুড়ি ও শ্যালিকারা তাকে মেরেছে।
প্রসঙ্গত, আলমডাঙ্গা জেহালার বিশিষ্ট ঠিকাদার ব্যবসায়ী কামাল হোসেনকে (৬৪) পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। জমি নিয়ে বিরোধে গত সোমবার দিনগত রাত ১১টার দিকে এ হত্যাকান্ড ঘটে। একই গ্রামের ঘরজামাই স্বাধীন নামের এক ব্যক্তি তাকে হত্যা করেছেন বলে পারিবারিকভাবে দাবি করা হয়েছে। স্বাধীন জেহালার মোতাহার আলীর জামাই। নিহত কামাল হোসেন জেহালা গ্রামের প্রয়াত জাহান আলী মাস্টারের ছেলে। তিনি ঠিকাদারী করতেন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ক্লিনিকে ও পরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আহসানুল হক বলেন, হাসপাতালে নেয়ার আগেই তার মৃত্যু ঘটে।
নিহত কামাল হোসেনের স্ত্রী সেলিনা খাতুন জানান, ‘আমার স্বামীর সাথে স্বাধীনের জমি নিয়ে বিরোধ চলছিলো। গত পরশু স্বাধীন আমার স্বামীকে হত্যার হুমকিও দিয়েছিলো। মৃত্যুর আগে আমার স্বামী বলে গেছে স্বাধীন তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়েছে।’
আলমডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল আলিম জানান, ওই রাতে ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। ঘটনার পর অভিযুক্ত স্বাধীন পলাতক। তাকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।

Comments (0)
Add Comment