রহমান মুকুল: যেন অগণন দীপ্ত তারার নীচে আলোর উৎসব বসেছিল আলমডাঙ্গায়। এ যেন জ্যোৎস্নাঘেরা এক সকালের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে উঠছে –“আমরাও হার মানি এই হাসিমুখের দীপ্তিতে।” চাঁদের হাট নয়-এ ছিল চিত্তের উৎসব, প্রতিভার সম্মিলন। শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়েছিলেন সম্মান আর স্নেহের আলিঙ্গণে। হাসিমাখা মুখ, বুকভরা অর্জন আর চোখজোড়া স্বপ্ন আর আকাশ ছোঁয়া প্রত্যয় নিয়ে উপজেলার কৃতি শিক্ষার্থীরা মিলিত হয়েছিল এ অনন্য আয়োজনে। মঞ্চজুড়ে ছিল উৎসবের নীরব স্পন্দন। শুধু করতালি নয়, প্রতিটি মুহূর্তে উচ্চারিত হচ্ছিল একটি প্রজন্মের অদম্য অভিযাত্রার অশ্রুত বিহগল। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পারফরমেন্স বেজড গ্র্যান্টস ফর সেকেন্ডারি ইন্সটিটিউশনস স্কিম (ঝঊউচও)-র আওতায় আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নির্বাচিত ৩৪ জন কৃতি শিক্ষার্থীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে। যার প্রতিটি দেয়ালে যেন অনুরণিত হচ্ছিল তরুণ চোখে জ্বলে থাকা আগামীর সম্ভাবনা। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দিল আরা চৌধুরী। প্রধান অতিথি ছিলেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকর্মী কমিশনার (ভূমি) আশীষ কুমার বসু। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. মফিজুর রহমান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হক, জেলা সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক মুস্তাকিন বিল্লাহ, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ওল্টু, পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইলিয়াছ হোসেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার ইমরুল হক। বক্তব্য রাখেন বেলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জামায়াত নেতা মামুন রেজা, প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম, পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম, অভিভাবক আব্দুর রাজ্জাক। এ সময় অভিভাবকদের কণ্ঠে ভেসে এল গর্ব আর ভালোবাসার কাব্য। মঞ্চে উঠে নিজস্ব ভাষায় আলো ছড়ালো তাফরিন আক্তার তিয়া, নাবিফ হাসনাতসহ নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা। ২০২২ ও ২০২৩ সালে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ নম্বর ও জিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট, সনদপত্র ও আর্থিক সম্মাননা তুলে দেয়া হয়। এ সময় তাদের চোখে ছিল বিস্ময়, অনুপ্রেরণা আর দায়বদ্ধতার দীপ্তি। উপস্থিত ছিলেন উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, অভিভাবক, শুভানুধ্যায়ীরা। আর মিলনায়তনের প্রতিটি আসনে বসেছিল ভবিষ্যতের অঙ্কুর। এই আয়োজন শুধু সংবর্ধনা নয়
এ এক আলোক সংক্রমণ, যেখানে স্বপ্নেরা পেলো ডানা, আর দায়িত্ব পেলো শপথ। এ আয়োজন শুধু কয়েকজন কৃতি নয়, যেন একটি প্রজন্মের আত্মবিশ্বাস পেয়েছিল দাঁড়ানোর মঞ্চ আর আলমডাঙ্গা দেখেছিল। স্বপ্নগুলো কেবল বইয়ের পাতায় থাকে না, ঠিক সময়ে তারা আলোর নিচে উঠে আসে। আজ তাদের স্বপ্নেরা পেল ডানা আর দায়িত্বরা হয়ে উঠল শপথদীপ্ত অঙ্গিকার। এ সন্মাননা অনুষ্ঠান যেন শুধুমাত্র একটি মুহূর্তের নয় এটি আগামীর সম্ভাবনাকে উৎসাহ দিয়ে গড়ে তোলার মৌন উচ্চারণ।