আলমডাঙ্গায় ব্যবসায়ীর কাছে টাকা চেয়েও নিতে গেলেন না ‘নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট’ পরিচয়দাতা প্রতারক মাহবুব

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে আলমডাঙ্গার দুটি মিষ্টির দোকানে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছে এক প্রতারক। দাবিকৃত টাকা না দিলে তাদের দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করারও হুমকি দেন তিনি। তার হুমকিতে এক ব্যবসায়ী পরদিন টাকা দিতে রাজি হলেও ফসকে গেছে অন্যজন। পরদিন সকালেই বিষয়টি জানাজানি হওয়ার কারণে অবশ্য প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন টাকা দিতে রাজি হওয়া ওই ব্যবসায়ী। গত রোববার রাতে নিজেকে ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের’ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে আলমডাঙ্গার দুই হোটেল মালিকের কাছে মোবাইলফোনে টাকা দাবি করেন ওই প্রতারক। যদিও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কোন পদ নেই। পরদিন গতকাল সোমবার বিষয়টি জানাজানি হলে আলমডাঙ্গার ব্যবসায়ীদের মধ্যে তোলপাড় দেখা দেয়।

জানা যায়, গত রোববার রাত ৯টার দিকে ০১৭১৩-১৬৬৬২১ নম্বর থেকে আলমডাঙ্গা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম স্বপনকে ফোন করে নিজেকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব হোসেন বলে পরিচয় দেন। ওই সময় তিনি কাউন্সিলরের কাছে আলমডাঙ্গা শহরের বড়বড় মিষ্টির হোটেল মালিকের মোবাইল নম্বর জানতে চান। কিন্তু কাউন্সিলর স্বপন তাৎক্ষণিকভাবে হোটেল মালিকদের মোবাইল নম্বর দিতে না পারলেও আলমডাঙ্গার অধিকারী মিষ্টান্ন ভা-ারের মালিকের ছেলে রাজকুমার অধিকারীর সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দেন। সেসময় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দাবি করা ওই প্রতারক বলেন, ‘আলমডাঙ্গাসহ চুয়াডাঙ্গার অনেক মিষ্টির হোটেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। সে মোতাবেক একটি তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। তালিকায় থাকা মিষ্টির দোকান বা হোটেলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হবে। অনেক হোটেল বন্ধ করেও দেয়া হবে। ওই তালিকায় আপনার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামও তালিকায় রয়েছে। তালিকা থেকে নাম কাটাতে হলে এখনই বিকাশে ৪০ হাজার টাকা পাঠান।’ প্রতুত্তরে রাজকুমার বলেছেন, ‘তিনি বাইরে আছেন, বাড়ি ফিরে বাবার সাথে কথা না বলে টাকা দিতে পারবেন না।

এরপর একই নম্বর থেকে আলমডাঙ্গা হাইরোডের কুটুমবাড়ি নামক মিষ্টির হোটেলের মালিক আনোয়ার হোসেনকে ফোন করা হয়। অনুরূপভাবে নিজেকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব হোসেন দাবি করে তার কাছে টাকা দাবি করে প্রতারক। হোটেল মালিক আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, তাকে বলা হয় ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান টিম আপনার হোটেলসহ বেশ কয়েকটি হোটেলে অভিযান চালাবে। আপনার হোটেলের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। ৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদ-াদেশ দেয়া হবে। এছাড়া হোটেল সিলগালা করা হবে। এই তালিকা থেকে নাম কাটতে হলে এখনই বিকাশে ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে।’ জবাবে আনোয়ার হোসেন ওই প্রতারককে বলেন, তিনি গরীব মানুষ, এতো টাকা দিতে পারবেন না। শেষ পর্যন্ত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দাবি করা ব্যক্তি ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। সে সময় হোটেল মালিক পরদিন সকাল ১০টায় টাকা দিতে সম্মত হন।

এরই মধ্যে এ ঘটনা শহরময় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে অনেকেই জানতে পারেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকেন না। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পদও নেই। জরিমানা বা অভিযান পরিচালনা করে থাকেন অধিদফতরের  সহকারী পরিচালক। বিষয়টি অনেকের অজানা থাকলেও পরে আর জানতে বাকি থাকে না কোনো ব্যবসায়ীর। এরই মধ্যে অনেকেই চুয়াডাঙ্গা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সজল আহম্মেদের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, টাকা দাবি করা ভূয়া ম্যাজিস্ট্রেটকে টাকা দেয়ার কথা বলে কৌশলে ডেকে নিয়ে বেঁধে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

এদিকে, পরদিন অর্থাৎ সোমবার সকালে টাকা দেয়ার কথা থাকায় যথাসময়ে ম্যাজিস্ট্রেট দাবি করা ব্যক্তি একই নম্বর থেকে আনোয়ার হোসেনকে ফোন করেন। ১০ হাজার টাকা বিকাশ করতেও তাগাদা দেন ওই প্রতারক। কিন্তু এরইআগে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার কারণে আনোয়ার হোসেন কৌশলে ওই প্রতারককে ডেকে নেয়ার চেষ্টা করে বলেন, ‘বিকাশে টাকা দেবো না। আপনি সরাসরি এসে নিয়ে যান। আপনার সাথে একটু পরিচয় হোক।’ আনোয়ার হোসেনের এমন নেতিবাচক কথায় রেগে গিয়ে ভূয়া ম্যাজিস্ট্রেট রাগান্বিত স্বরে বলেন, ‘এই গাড়ি বের করো তো।’ সকাল থেকে রাত নেমে এলেও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির দেখা মেলেনি আলমডাঙ্গায়।

 

Comments (0)
Add Comment