কালীগঞ্জে সংঘর্ষ : নিহত জামায়াত কর্মীকে বিএনপি সাজিয়ে বাণিজ্য

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সামাজিক আধিপত্য বিস্তারের জেরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ইউনুস আলী বিশ্বাসকে জামায়াতের কর্মী বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, জামায়াতে ইসলামীর কর্মীকে বিএনপির কর্মী বানিয়ে অপরাজনীতি করছে একটি মহল। এদিকে গত ২০ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী সাধারণ সভায় অংশ নিয়েছিলেন ইউনুস। এ ঘটনার একটি ভিডিও বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর থেকে জেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করছে।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, কালীগঞ্জের বড় তালিয়ান মাদরাসা মাঠে নির্বাচনী সমাবেশ ও দরিদ্র শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী মাওলানা আবু তালিব, বিশেষ অতিথি কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের জামায়াতের চেয়ারম্যান প্রার্থী মাওলানা ওলিউর রহমান, জামাল ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর মোস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করতে দেখা যায় ইউনুস আলীকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামাল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মোল্লার সঙ্গে যুবদল নেতা আরিফ হোসেনের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। নজরুল মোল্লা আওয়ামী শাসনামলে প্রথমে মান্নান এমপি ও পরে আনার এমপির ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিল। এমনকি এমপি আনারের নির্দেশে বিরোধীমত বিএনপি-জামায়াত নিধনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নিজের খোলস বদলে বিএনপিতে যোগদান করেন। তখন থেকে জামাল ইউনিয়নে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। এরই জেরে গত ১লা জুন সকালে জামাল ইউনিয়নের নাকোবাড়িয়া গ্রামে নজরুল ইসলাম মোল্লা তার অনুসারীদের নিয়ে সাধারণ মানুষের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট করতে থাকে। সে সময় যুবদল নেতা আরিফের অনুসারীরা তাদের বাধা দিতে থাকে। পরে উভয় গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে অন্তত ৫ ব্যক্তি আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে মহব্বত হোসেন নামের একজনের অবস্থা সংকটাপন্ন হলে তাকে ফরিদপুর মেডিকেলে পাঠানো হয়। পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়। এর পরদিন যশোরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান তারই ভাই ইউনুস আলী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতে ইসলামীর কালীগঞ্জ উপজেলার দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, ‘ইউনুস আলী অনেক আগেই থেকে জামায়াতের সমর্থক ছিলেন। মাঝে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের সময় ভয়ভীতির কারণে আমাদের কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতে পারেনি। সে আমাদের প্রকৃত একজন কর্মী। শুনলাম বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হওয়ার পর তাঁর হত্যাকা- নিয়ে বাণিজ্য করছে একটি মহল। বিএনপির একটি গ্রুপ রাজনৈতিক ফায়দা নিতে ইউনুস আলীকে দলীয় কর্মী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন।’
ঝিনাইদহ-৪ আসনে জামায়াতের নির্বাচনী পরিচালক ও উপজেলার সাবেক আমির মাওলানা ওলিউর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করা হচ্ছিল ইউনুছ আলীকে দলে ভেড়ানোর। কিন্তু আমরা পারিনি।’
ঝিনাইদহ জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আলী আজম মো. আবু বকর বলেন, ‘সামাজিক যোগযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন ভাবে জানতে পেরেছি নাকোবাড়িয়া গ্রামে হত্যাকা-ের শিকার ইউনুছ আলী জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ইতিমধ্যে আমরা এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছি।’
কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইলিয়াস রহমান মিঠু বলেন, ‘নাকোবাড়িয়ায় সামাজিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত দুইজন জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। কিন্তু একটি পক্ষ বিএনপির কর্মী বলে দাবি করছে। গত ১৭ বছরে বিএনপির কোন কর্মসূচিতে তাদের দেখা যায়নি। তাদের একজন দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকতেন। কর্মী না হলে জামায়াতের নির্বাচনী সভায় কিভাবে যোগদান করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষকে পুঁজি করে বিএনপির ত্যাগী নেতা ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল ইসলামকে মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। যার সঙ্গে ঘটনার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অথচ কালীগঞ্জ থানার ওসি গড়িমসি করে তদন্ত ছাড়াই তার নাম এজাহারে অন্তর্ভুক্ত করে মামলা গ্রহণ করেছেন। অবিলম্বে নুরুল ইসলামের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং সহিংসতার মূল হোতা আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল মোল্লা ও আলাউদ্দিন আল আজাদকে দ্রুত গ্রেপ্তার না করা হলে লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হবে।’