কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় সালিসে চড়-থাপ্পড় দিয়ে ধর্ষণের ঘটনা মীমাংসার অভিযোগ উঠেছে সমাজপতিদের বিরুদ্ধে। আইনি ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিলেও ভুক্তভোগী পরিবার সেটা করেনি বলে জানান সালিসদাররা। স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্র জানায়, ১১ জুন প্রতিবেশী শিশুকে ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে বিশা (৬০) নামের এক বৃদ্ধ। পরে বিষয়টি নিয়ে গ্রামে সালিস বৈঠকের আয়োজন করে মাতব্বররা। এদের মধ্যে সমাজ প্রধান রহিম ম-ল ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মতিউর রহমান লিটন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে অভিযুক্ত বৃদ্ধকে চড়-থাপ্পড় মেরে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়। ঘটনার দুদিন পর শিশুটি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে সরেজমিনে জেনারেল হাসপাতালের গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ বছরের শিশুটি হাসপাতালের বেডে শুয়ে রয়েছে। তার পাশে বাবা-মা বসে রয়েছেন। এ সময় তার মা বলেন, ঘটনার দিন সকাল ৯টার দিকে আমি মাকে বাড়িতে এগিয়ে দিতে গেছিলাম। এ সুযোগে বিশা কাকা মেয়েকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর মেয়েকে ওই বাড়ি থেকে খুঁড়িয়ে আসতে দেখে সন্দেহ হয়। বিষয়টি গ্রামের মুরুব্বিদের জানালে তারা পরদিন (বৃহস্পতিবার) রাতে বাড়িতে সালিস বসায়। সালিসে বিশাকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে মাতব্বররা বলে যে সালিস শেষ। পরদিন (শুক্রবার) মেয়ের পেট ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি।
মামলা করতে কেউ বাধা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে শিশুটির মা প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলেন, ‘মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে থানায় যাইনি। মেম্বার ও সমাজ প্রধান বলেছে আগে চিকিৎসা নিয়ে এসো তারপর মামলা করতে সব ধরনের সহযোগিতা করবো। আমিও মামলা করবো।’
সালিসি বৈঠকে উপস্থিত থাকা স্থানীয় ইউপি সদস্য মতিউর রহমান লিটন হোসেন বলেন, ‘ভুক্তভোগী পরিবারকে মামলা করতে বলেছিলাম। তারা যায়নি। তবে সালিসে চড়-থাপ্পড় মেরে মীমাংসা করেছিল অভিযুক্তের ভাই-ভাস্তেরা। আমি শুধু উপস্থিত ছিলাম।’ এ ঘটনায় সমাজ প্রধান রহিম ম-ল বলেন, ‘সামাজিকভাবে আমরা বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম। সেখানে অভিযুক্তকে চড়-থাপ্পড় মারা হয়েছিল। তাদের মামলাও করতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা সেটি করেননি।’ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম বলেন, ‘ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’ পাটিকাবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এস আই) নুরনবী বলেন, ওসির নির্দেশে শিশুকে হাসপাতালে দেখে এসেছি। চিকিৎসা শেষে পরিবারকে থানায় আসতে বলা হয়েছে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’