গাংনীতে জমি জালিয়াত চক্রের ৫ সদস্য আইনের আওতায়

গাংনী প্রতিনিধি: গাংনীতে জমি জালিয়াতি চক্রের ৫ সদস্য অবশেষে আইনের আওতায় এসেছে। পেশিশক্তিবলে দীর্ঘদিন ধরে জমির মালিকের মুখ বন্ধ রাখা হলেও শেষ পর্যন্ত আইনের আশ্রয় নিতে সক্ষম হন ভুক্তভোগী গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া (কষবা) গ্রামের হাবিল উদ্দীন।
হাবিল উদ্দীনের মামলায় আসামি জমি জালিয়াতকারী হারেজ উদ্দীন, দলিল লেখক (মহুরা) হেমায়েতপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ ও মহুরার সহযোগী হেমায়েতপুর গ্রামের সাবের আলীর ছেলে আসাদুল ইসলাম, কাজিপুর গ্রামের মুনছুর আলীর ছেলে আবুল কাশেম ও ধানখোলা গ্রামের ফজল হকের ছেলে খাইরুল ইসলামের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) জারি করেন বিজ্ঞ আদালত। এদের মধ্যে হারেজ ও আসাদুল ইসলাম জেলহাজতে রয়েছে।
অভিযোগে জানা গেছে, ভাটপাড়া গ্রামের হাবিল উদ্দীনের রেজিস্ট্রি মালিকানার ৭ শতক জমি তার আপন ভাই হারেজ উদ্দীন জাল করে। বিষয়টি জানতে পেরে হাবিল উদ্দীন ও তার পরিবারের লোকজন হারেজ উদ্দীনের কাছে ধর্না দেয়। জালিয়াতির বিষয়ে অনুতপ্ত না হয়ে উল্টো ভাইয়ের পরিবারকে হুমকি দেয় হারেজ উদ্দীন। এক পর্যায়ে গ্রামের কিছু প্রভাবশালী লোকের সহায়তায় হাবিল উদ্দীনকে গ্রামছাড়া করার চক্রান্ত শুরু করে। গ্রামের কয়েক মোড়ল হাবিল উদ্দীনকে চুপ থাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। একদিকে জমি হারানোর আশঙ্কা অন্যদিকে প্রভাবশালীদের চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েন পেশিশক্তিতে দুর্বল হাবিল উদ্দীন ও তার পরিবারের সদস্যরা। নিরুপায় হয়ে তারা আদালতের আশ্রয় নেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, হাবিল উদ্দীন বাদি হয়ে ৫ জনের নামে মামলাটি দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুষ্টিয়ার এক কর্মকর্তা তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট প্রদান করেন। চার্জশিটে তিনি প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে ক্ষতিগ্রস্তদের বিচার প্রাপ্তির সুযোগ করে দিয়েছেন বলে মন্তব্য এলাকার অনেকে।
মামলার প্রধান আসামি হারেজ উদ্দীন। হারেজ উদ্দীন তার ভাই হাবিল উদ্দীনের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও ছবি সংগ্রহ করেন। এগুলো কাজে লাগিয়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে হাবিল উদ্দীন সাজিয়ে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে যান। জালিয়াতির এই ঘটনার দলিল লেখা সম্পন্ন করেন গাংনী সাব রেজিস্ট্রি অফিসের মহুরা হেমায়েতপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ। আব্দুল আজিজের সহযোগী হেমায়েতপুর গ্রামের আসাদুল ইসলাম ও কাজিপুর গ্রামের আবুল কাশেম ছিলেন দলিলের স্বাক্ষী। একই মহুরার অপর সহযোগী ধানখোলা গ্রামের খাইরুল ইসলাম ওই দলিলের শনাক্তকারী। আইন অনুযায়ী জমিদাতা, স্বাক্ষী, শনাক্তকারী ও গ্রহিতরা সামনে দলিল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়েছিল। মহুরা, শনাক্তকারী ও স্বাক্ষীরা অজ্ঞাত ওই ব্যক্তিকে হাবিল উদ্দীন হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন।
বিজ্ঞ আদালত ৫ আসামির নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল করতে গাংনী থানার এসআই মাসুদুর রহমান পৃথক অভিযানে হারেজ উদ্দীন ও আসাদুল ইসলামকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেন। এ দুজন আদালতের নির্দেশে জেল হাজতে রয়েছে। অপর দুই আসামি মহুরা আব্দুল আজিজ ও তার সহযোগী খাইরুল ইসলাম আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। বিজ্ঞ আদালত তাদের দু’জনের জামিন মঞ্জুর করেছেন। অপর আসামি কাজিপুর গ্রামের আবুল কাসেম এখন আত্মগোপনে রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন এসআই মাসুদুর রহমান।
অভিযোগে জানা গেছে, গাংনী সাব রেজিস্ট্রি অফিস ঘিরে অনেক আগে থেকেই জমি জালিয়াতির একটি চক্র রয়েছে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে তা আবারও প্রমাণ হয়েছে। এই চক্রের মাধ্যমে অন্য কোন জমি জালিয়াতি হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখার দাবি রয়েছে। অপরদিকে এই ৫ আসামির দৃষ্টান্তমূলক সাজা হবে এমন প্রত্যাশা ভুক্তভোগীসহ এলাকার মানুষের।

Comments (0)
Add Comment