গৃহকর্মীর মৃত সন্তান প্রসব : পিত্বতের পরিচয় উদঘাটনে ডিএনএ টেস্টের উদ্যোগ পুলিশের

জীবননগর ব্যুরো: উপজেলার সীমান্ত এলাকার ধর্ষণের শিকার এক গৃহপরিচালিকা তরুণী ৫ মাস বয়সী মৃত সন্তানের জন্ম দিয়ে আলোচনার উঠে এসেছে। পল্লী চিকিৎসক শামসুল হুদার ওষুধ খেয়ে অসময়ে ভুমিষ্ট হওয়া মৃত ওই বাচ্চার পিতৃ পরিচয় নিয়ে ধু¤্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। অসুস্থ ওই কুমারী মাতা মৃত বাচ্চার পিতৃ পরিচয় বলতে গিয়ে দু’জনের নাম বলাতে পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়েছে। কে তার সন্তানের পিতা? কুষ্টিয়ার ওই গৃহকর্তা, না গ্রামের তার মামাতো ভাই? এ নিয়ে ধন্দে পড়া পুলিশ প্রকৃত পিতৃ পরিচয় উদঘাটনে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে ধর্ষক শনাক্তের উদ্যোগ নিয়েছে। আলোচিত এ ঘটনাটি ঘটেছে জীবননগর উপজেলার গোয়ালপাড়া গ্রামে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের এতিম নাবালিকা ৫ বছর বয়সে গৃহপরিচালিকার কাজ নিয়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মিনাপাড়ার ওয়াজ বিশ্বাসের ছেলে দিপুর বাড়িতে যায়। সেখানে দীর্ঘ ১২ বছর কাজ করার পর দিপু তাকে তার ভাগ্নে মিঠুর বাড়িতে পাঠায়। ১৩ বছর কাজ করার পর করোনা ভাইরাসের মধ্যে সে বাড়ি ফিরে আসে। পরবর্তীতে সে আবার কুষ্টিয়াতে ফিরে যায় এবং গত রোজার ঈদে বাড়িতে আসে ঈদ করতে। তরুণীর মামা বাড়ি একই গ্রামে। গ্রামে এলে ওই সময় তার মামা আব্দুল জব্বারের ছেলে আলামিন (২৩) তাকে জোরপূর্বক একাধিকবার ধর্ষণ করে বলে ওই তরুণী প্রথমে জানায়। পরে আবার সে তার মত পরিবর্তন করে কুষ্টিয়ায় গৃহকর্তা তাকে ধর্ষণ করলে সে গর্ভবতী হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ করে। ফলে মৃত ওই বাচ্চার প্রকৃত পিতৃ পরিচয় নিয়ে ধু¤্রজালের সৃষ্টি হয়। এদিকে একটি কুচক্রি মহল ঘটনা ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লেগেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এলাকাবাসী জানায়, শুক্রবার রাতে ওই তরুণী পেটে ব্যাথা নিয়ে গ্রামের পল্লী চিকিৎসক শামসুল হুদার নিকট যায়। এসময় তার মা হাওয়া খাতুন তার সঙ্গে ছিলেন। পল্লী চিকিৎসক তরুণীকে ওষুধ দেন। ওষুধ খেয়ে বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষণের শিকার তরুণী রাস্তার ভেতর সন্তানের জন্ম দিলে তা উপস্থিত সকলের নজরে আসে। শুরু হয় ধর্ষক ও মৃত বাচ্চার পিতৃ পরিচয় উদঘাটনের চেষ্টা। এসময় ওই কুমারী মা জানায়, তার মামাতো ভাই আলামিন তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করলে তার এ পরিণতি হয়েছে। পরবর্তীতে সে আবার তার মত পরিবর্তন করে জানায়, কুষ্টিয়ার তার গৃহকর্তা তাকে ধর্ষণ করে। তবে গৃহপরিচালিকা ওই তরুণী ও তার পরিবার প্রকৃত তথ্য আড়াল করার চেষ্টা করছে বলে অনেকেই অভিযোগ করেছে। এদিকে গৃহকর্মীর মা হাওয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়েকে গোয়ালপাড়া গ্রামের ডাক্তার শামসুদ্দিন কুষ্টিয়ায় তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে কাজের জন্য ১৩ বছর পূর্বে পাঠায়। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে অসুস্থতা নিয়ে সে বাড়ি ফেরে। অসুস্থ মেয়েকে চিকিৎসা জন্য শুক্রবার রাতে ডাক্তার শামসুল হুদার নিকট  নিয়ে যায়। তিনি সব শুনে মেয়েকে ওষুধ খাইয়ে দেন। ওষুধ সেবনের পর বাড়ি ফেরার পথে তার বাচ্চা পড়ে যায়। আমার মেয়ের মাথায় কাজ করছে না। আমি প্রকৃত অপরাধীর শাস্তি চাই।

পল্লী চিকিৎসক শামসুল হুদা সাংবাদিকদের জানান, আমি তার মেয়েকে কোনো চিকিৎসা দিইনি। পেটে বাচ্চা আছে এ কথা শুনে আমি তার মাকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য বলি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। সীমান্ত ইউপি চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন ময়েন বলেন, গোয়ালপাড়া গ্রামে কুমারী মেয়ের মৃত বাচ্চা প্রসবের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। বিষয়টি পুলিশকে জানালে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। তবে এ ঘটনার সাথে যেই জড়িত থাকুক না কেনো আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। জীবননগর থানার সাব-ইন্সপেক্টর আনিসুর রহমান জানান, পিতৃ পরিচয়ের জন্য দু’ জনের নাম আসাতে বাচ্চাটির মৃতদেহ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা মর্গে পাঠানো হয়েছে। ডিএনএ টেস্টের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জীবননগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম জানান, ডিএনএ টেস্টের জন্য রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর আইনগত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

Comments (0)
Add Comment