চুয়াডাঙ্গায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে বেওয়ারিশ গরুর দৌরাত্ম্য নষ্ট হচ্ছে শহরের পরিবেশ: প্রশাসনের অভিযান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন।

স্টাফ রিপোর্টার:চুয়াডাঙ্গা শহর ও আশপাশের এলাকায় বেওয়ারিশভাবে ছেড়ে রাখা গরুর কারণে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। চলাচলের রাস্তা দখল করে রাখা এসব গরুর কারণে যেমন বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি, তেমনি নষ্ট হচ্ছে শহরের পরিবেশ ও সৌন্দর্য। এমন অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন নিয়েছে কঠোর পদক্ষেপ নিলেও তেমন পদক্ষেপ না থাকায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে‌।

যদিও প্রশাসনের এমন উদ্যোগ অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন, তবে বাস্তবচিত্র বলছে ভিন্ন কথা।
গত ১৩ জুলাই চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে একটি গরুর ধাক্কায় দুর্ঘটনার শিকার হন দৈনিক মানবকণ্ঠের চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি মো. আব্দুল্লাহ হক। তিনি বলেন,“সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ একটি গরু সামনে চলে আসে। ধাক্কা লেগে আমি মাটিতে পড়ে যাই। প্রায় ৩০ মিনিট অচেতন ছিলাম। পরে আমাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনো আমি পুরোপুরি সুস্থ নই।”

এছাড়াও শহরের বিভিন্ন এলাকায় গরুর অবাধ বিচরণ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জীবন আহমেদ নামে এক বাসিন্দা বলেন, “কোট মোড় থেকে কলেজ রোড পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে গরুর দৌরাত্ম্য দেখা যায়, বিশেষ করে রাতের বেলায় রাস্তায় শুয়ে থাকে। এটা খুব বিপজ্জনক।”
শহরের দোকানদার ফয়সাল আহমেদ বলেন,
“গরুগুলো দোকানের সামনে বসে পড়ে, মলত্যাগ করে। আমরা গরু তাড়াতে পারি না। এতে ভীষণ সমস্যা হয়। প্রশাসন কঠোরভাবে ব্যবস্থা নিলে এ সমস্যা দূর হতো।”

যদিও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযানের কথা বলা হয়েছে, বাস্তব চিত্র ভিন্ন। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় এখনো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গরুগুলো অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
বিশেষ করে কোট মোড়, কলেজ রোড, শহরের প্রাণকেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে গরুর উপস্থিতি যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক গরু রাস্তার পাশে পড়ে থাকে, খাবারের সন্ধানে ঢুকে পড়ে ড্রেন বা ময়লার স্তূপে।

জনসাধারণের অভিযোগ—কিছু গরু আটক ও সামান্য জরিমানার মধ্যে প্রশাসনের পদক্ষেপ সীমাবদ্ধ। এতে দীর্ঘমেয়াদে কোনো ফল আসছে না।
একাধিক সচেতন নাগরিক বলছেন,“শুধু গরু ধরলেই হবে না, মালিকদের শনাক্ত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। নইলে বারবার একই সমস্যা হবে। প্রশাসন কি আদৌ এই বিষয়ে আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে, নাকি কাগজে-কলমেই অভিযান চলছে—এই প্রশ্ন এখন শহরবাসীর মুখে মুখে।”

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম সাইফুল্লাহ জানান, গরুর মালিকদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে এবং তাদের জরিমানা করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, ১৬ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত মোট চারটি অভিযান চালানো হয়। এসব অভিযানে সাতজন গরুর মালিককে মোট ১৩ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা মুচলেকা দিয়েছেন যে, ভবিষ্যতে তারা গরু ছেড়ে দেবে না। তবে তারা নানা অজুহাতও প্রদান করে। “পৌরসভার জনবল (লেবার)সংকটের কারণে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না, তবে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে এবং নিয়মিতভাবে পরিচালিত হচ্ছে।”

একজন স্থানীয় সাংবাদিক মন্তব্য করেন,“যদি প্রশাসন প্রতিটি গরুর মালিককে শনাক্ত করে মোটা অংকের জরিমানা ও প্রচারমূলক শাস্তি দিতো, তাহলে আর কেউ সাহস করত না গরু ছেড়ে রাখার।”
চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক জহিরুল ইসলাম দৈনিক মাথাভাঙ্গার মাল্টিমিডিয়া ইনচার্জ শেখ রাকিব কে বলেন,“পৌর এলাকায় যত্রতত্র গরু ঘোরাফেরা করায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে। আমরা অভিযান শুরু করেছি এবং ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি গরু আটক করা হয়েছে।”

জেলা প্রশাসক আরও জানান “যদি কেউ এসে আটক গরুর মালিকানা দাবি করেন, তাকে নির্ধারিত জরিমানা দিয়ে গরু ছাড়িয়ে নিতে হবে। সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ছবি তুলে গরু মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেউ মালিকানা দাবি না করলে, সরকারি বিধি অনুযায়ী গরুগুলো নিলামে বিক্রি করা হবে।”

জননিরাপত্তা ও শহরের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে এমন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছেন বলেও জানান তিনি। ভবিষ্যতে গরু অবাধে ছেড়ে রাখার প্রবণতা বন্ধ না হলে জরিমানার পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।