চুয়াডাঙ্গার ছোটশলুয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারিয়ে যুবকের শিকলবন্দি জীবন

গড়াইটুপি প্রতিনিধি: অভাব অনটন দূর করতে, দু’বেলা দ’ুমুঠো খাবারের আশায়, গ্রাম ছেড়ে পাড়ি জমান ঢাকায়। গ্রামে পর্যাপ্ত কাজের অভাবে পেটের দায়ে ঢাকায় সিম্ফনি কোম্পানিতে একটি ছোটোখাটো পোস্টে চাকরি নিলেন। অভাব অনটনের মধ্যথেকেই পিতা-মাতা দুই ভাইবোন নিয়ে কোনোরকম সংসার চলতো তাদের। বাড়ির কাছেই অফিস হওয়ার কারণে নিয়মিত পায়ে হেঁটেই যাতায়াত করতেন। গত কোরবানি ঈদের ৩দিন পর অর্থাৎ ৪র্থ দিন। ঢাকার কোনাবাড়ী, মৌচাক এলাকায় যথারীতি অফিসে যাবার পথে রাস্তা পার হতে গিয়ে হঠাৎ ঘটে মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনা। একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। বিষাদময় হয় জীবন। দ্রুতগতির একটি কাভার্ড ভ্যানের চাপায় মারাত্মক জখম হন তিনি। শরীরের অধিকাংশ স্থান ছেচে যায়। ভর্তি করা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকের পরামর্শে তার বাম পা কেটে ফেলতে হয়। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় যে সংসারে; ঢাকা শহরের মতো স্থানে তার চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে কে? সংসার চালানোই কষ্ট সাধ্য। কোনোরকম বিভিন্ন মানুষের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে এবং নিজের সর্বস্ব চিকিৎসায় ব্যয় করে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হন। গ্রামে আসেন প্রায় ১ বছর হলো। সদা-হাস্যজ্জ্বল টগবগে যুবক এক পা হারিয়ে এখন শিকলবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বলা হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের ছোটশলুয়া পূর্বপাড়ার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে আকিদুল ইসলাম। বাবা আব্দুল কুদ্দুস একজন দিনমজুর। অন্যের ক্ষেতে শ্রম বেঁচে সংসারের হাল ধরেছেন। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। মা-বাবা প্রতিবন্ধী ছেলে ও তার ছোট ভাই। ছোট ছেলে স্থানীয় একটি মাদরাসায় লেখাপড়া করে। ৪ জনের সংসার প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিৎসা ব্যয়, সংসার, চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। চর্তুরদিকে বাঁশবাগান তার মাঝখানে ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘর সেখানেই আপাতত বাস করছেন। নিজের জায়গা জমি বলতে কিছুই নেই। প্রতিবন্ধী ওই যুবকের এখন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। মাঝে মাঝে স্মৃতিশক্তি লোপ পায় আবার মাঝে মাঝে স্বাভাবিক আচরণ করছেন। তার মায়ের সাথেও মাঝে মাঝে মারমুখী আচরণ করে থাকে। মা তো মা-ই হয়, যার তুলো না সে নিজেই। শত যন্ত্রণার মাঝেও মায়ের বিন্দুমাত্র বিরক্তির লেশমাত্র নেই। আগলে রেখেছেন স্নেহভরা ভালোবাসায়। মায়ের অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে এই প্রতিবেদকের কাছে বলেন, বাবা আমার ছেলেকে নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ১ বছর ভূগছি। নিজেদের সংসারই চলে না; তারপর ছেলের চিকিৎসার খরচ চালাতে খুব কষ্ট হয়। সংসারে মাত্র একজন উপায় (উপার্জন) করে। শাক-ভাত খেয়ে কোনরকম বেঁচে আছি। এতোদিন নিজেদের সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। কারো দারস্থ হয়নি। খুব খারাপ লাগে কারো কাছে হাতপেতে নিতে। কিন্তু আল্লাহ আমাদের কঠিন পরীক্ষা নিচ্ছে। একদিকে অভাবী সংসার, অন্যদিকে ছেলের চিকিৎসা ব্যয়। নিজের সন্তানকে তো ধুকে ধুকে মরতে দিতে পারি না। আকিদুলের মূল সমস্যা এখন মাথা খারাপ (মানসিক)। মাঝে মাঝে ভুল কথাবার্তা বলে, আবার মাঝে মাঝে স্বাভাবিক কথা বলে। তাকে ছেড়ে দিলে হারিয়ে যায়। একবার যশোর থেকে নিয়ে এসেছি। তাই এখন পায়ে শিকল পরিয়ে রেখেছি। ও হয়তো উন্নত চিকিৎসা পেলে সুস্থ হতে পারে। কিন্তু এতো টাকা জোগাড় করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সমাজের অনেক বড়লোক (ধনী) আছে তারা যদি একটু আমাদের সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেয়। তাহলে হয়তো আমার ছেলেটা পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে। আর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে। এদিকে প্রতিবেশীরা জানান, ছেলেটাকে নিয়ে তারা দুর্বীষহ জীবন অতিবাহিত করছে। কোনো সময় খেয়ে, না খেয়ে থাকে। এরমধ্যে ছেলের চিকিৎসা কিভাবে করবে। তার প্রসাব পায়খানা সব তার মা কেই করাতে হয়। আবার যখন সুস্থ থাকে তখন নিজে নিজেই লাঠি ভর করে সব কাজ করে। এসব মানুষের জন্য সমাজের বিত্তবানরা ও সরকারিভাবে কোনো সাহায্য সহযোগিতা করলে খুবই উপকার হবে। সকলের সদিচ্ছার প্রয়োজন। বিষয়টির প্রতি চুয়াডাঙ্গা জেলার মানবিক জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সমাজের ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিরা একটু সাহায্যর হাত বাড়ালে প্রতিবন্ধী এই যুবক সুচিকিৎসার মাধ্যমে ফিরে আসতে পারে স্বাভাবিক জীবনে। বেঁচে যেতে পারে একটি প্রাণ, খালি হবে না মমতাময়ী মায়ের কোল।
মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না..ও বন্ধু। চিরাচরিত এই উক্তিটিই যেন বাস্তবে রূপান্তর হয় এটাই কাম্য ওই প্রতিবেশীদের।

Comments (0)
Add Comment