চুয়াডাঙ্গার ঝাঝরিতে পুকুরের চারপাশে জিআই তারে বিদ্যুৎ সংযোগ বিদ্যুৎপৃষ্টে কৃষকের মর্মান্তিক মৃত্যু : লিজ গ্রহীতাদের শাস্তির দাবি

বেগমপুর প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার ঝাঝরি গ্রামে পুকুর লিজ নিয়ে মাছ রক্ষার্থে পুকুরের চারিপাশে জিআই তারে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে লিজ গ্রহীতারা। পানি খেতে গিয়ে সেই তারে হাত লেগে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে গ্রামের কৃষক এক সন্তানের জনক চাঁন মিয়ার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। লিজ গ্রহীতা বিদ্যুৎ সংযোগকারীদের শাস্তির দাবিতে ফুঁেস উঠেছে গ্রামবাসি। অবস্থা বেগতিক বুঝে গা ঢাকা দিয়েছে লিজ গ্রহীতা ঠিকাদার আব্দুল জলিল ও সহযোগি মাদক স¤্রাট আব্বাস উদ্দিন। এদিকে নিহত চাঁন মিয়ার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় দাফন কাজ সম্পন্ন করেছে পরিবারের লোকজন। বিক্ষিপ্ত গ্রামবাসি উত্তেজিত হয়ে লিজের একজন অংশিদারের দোকানপাট ও মোটরসাইকেল আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। অপর দিকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশ সূত্রে জানাগেছে।
গ্রামসূত্রে জানাগেছে, কেরুজ চিনিকলের আওতাধীন ঝাঝারি কৃষি খামারের খামার সংলগ্ন ৬ একর বিশিষ্ট ২টি পুকুর ৯ লাখ টাকায় লিজ নিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন কোটালী গ্রামের মৃত হারুন মেম্বরের ছেলে ঠিকাদার আব্দুল জলিল ও ঝাঝরি গ্রামের রজব আলীর ছেলে এলাকার চিহ্নিত মাককারবারি আব্বাস উদ্দিন। লিজ গ্রহীতারা পুকুরের মাছ চুরি শেয়াল ও মেছবাঘ থেকে পুকুরের মাছ রক্ষা করার জন্য পুকুরের চারিধারে জিআই তার দিয়ে বেড়া দিয়েছেন। গ্রামবাসি জানায়, মাছ ঠেকাতে লিজ গ্রহীতারা জিআই তারে বিদ্যুত সংযোগ দিয়ে রাখে। তা গ্রামের অনেকেই জানে আবার অনেকই জানে না। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঝাঝরি গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে এক সন্তানের জনক কৃষক চাঁন মিয়া (২৫) কৃষি খামারের ওই মাঠে গরুর জন্য ঘাস কাটতে যায়। ঘাস কাটার একপর্যায় চাঁন মিয়ার পানির পিপাশা লাগলে। সে পুকুরের পাড়ে মোটরপাম্প থেকে পানি পান করতে যায়। পুকুরের ধার ঢালু হওয়ায় পিছলিয়ে পড়ে যাবার আশঙ্কা দেখা দিলে চাঁন মিয়া ওই জিআই তার হাত দিয়ে চেপে ধরে। চেপে ধরার সাথে সাথে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ সময় মাঠের লোকজন তা দেখতে পেয়ে তার বাড়িতে খবর দেয়। সকাল ১০টার দিকে বেগমপুর ক্যাম্প পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছিয়ে নিহতের লাশ উর্দ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নামাজের যানাজা শেষে গ্রাম্য কবরস্থানে দাফন কাজ শেষে করে পরিবারের লোকজন। বিদ্যুৎ সংযোগকারি লিজ গ্রহীতাদের খুঁজে না পেয়ে ফুঁসে ওঠে গ্রামবাসী। একপর্যায় উত্তেজিত জনতা ঝাঝরি আবাসনের সামনে থাকা এলাকাকার চিহ্নিত মাদককারবারি একাধিক মাদক মামলার আসামি পুকুর লিজ গ্রহণের অংশিদার আব্বাসের দোকান ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়। তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পানিতে ফেলে দেয় এবং পুকুরের পাড়ে অবস্থানরত তিনটি মোটরচালিত সেচপাম্প ছুড়ে ফেলে দেয়। এদিকে পরিবারের একমাত্র উর্পাজনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে নিহতের পরিবারজুড়ে চলে শোকের মাতম। প্রতিবেশিরা জানায়, চাঁন মিয়ার পরিবারের একমাত্র উর্পাজন ব্যক্তিই ছিলো সে। তার এ মর্মান্তিক মৃত্যুতে পরিবারের থাকা পিতা, মাতা, স্ত্রী ও তিন বছরের শিশু সন্তানটি পড়ে গেলে অথৈই সাগরে। নিহত চাঁন মিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে লিজ গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। এব্যাপারে দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি শহীদ তিতুমীর বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এবাপারে বড় সলুয়া নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজের প্রাণীবিদ্যার প্রভাষক ও মানবতার জন্য সংগঠনের সভাপতি আহসান হাবীব বলেন, যেখানে বন্যপ্রাণি সংরক্ষন ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ অনুযায়ী বন্যপ্রাণি শিকার, বহন, ক্রয় বিক্রয় ইত্যাদি আইননুসারে স¤পূর্ণ নিষিদ্ধ। সেখানে একজন ব্যাক্তি মরন ফাঁদ দ্বারা সংরক্ষিত বন্যপ্রাণি নিধন করে যাচ্ছেন। তাকে পূর্বে বহুবার নিষেধ করার পরও একই কাজ করছেন। শুধু চুয়াডাঙ্গা নয় ইতিপূর্বে আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বন্যপ্রাণী নিধনের জন্য বৈদ্যুতিক তারের ব্যবহারের কথা শুনছি এবং সেই সাথে কয়েকটি স্থানে নিজের ফাদে মৃত্যু বরন করেছেন। তাই এখন এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। কঠোর আইনের শাসন দ্বারা বাংলাদেশের কোথাও বন্যপ্রাণি নিধন ফাঁদের ব্যাবহার বন্ধ করতে হবে। উল্লেখ্য, আব্বাস উদ্দিন ২০২১ সালে এই পুকুরের মাছ রক্ষার্থের অযুহাতে একইভাবে জিআই তারে বিদ্যুত সংযোগ দিয়ে ১০ শেয়াল মেরে ফেলে। তখন ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ও মুচলেখা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। ভবীষতে সে তারে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে বন্যপ্রাণী হত্যা করবে না বলে জানায়। এদিকে গ্রামবাসি গুরুত্বর অভিযোগ তুলে বলেন, আব্বাস পুকুরে চাষের অযুহাতে পুকুর পাড়ে দীর্ঘদিন থেকে নিরাপদ মাদকের ঘাটি তৈরী করেছে। যেখানে সন্ধ্যা হলে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোজন ভিড় জমায়। গ্রামবাসি অনেকবার প্রতিবাদ করেও ব্যর্থ হয়। এব্যাপারে লিজ গ্রহিতা আব্দুল জলিল ও আব্বাসের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
¬