চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফের উদ্যোগ

সীমান্তের শূন্যরেখায় শেষবার মায়ের মুখ দেখলেন দুই মেয়ে

স্টাফ রিপোর্টার: সীমান্তের ওপারে ভারতে মায়ের মৃত্যু হয়েছে। শেষবারের মতো প্রিয় মুখখানি দেখতে সেখানে ছুটে যেতে চান এপারে বসবাসকারী দুই মেয়ে। কিন্তু মাঝখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায় দুই দেশের সীমান্ত, যা পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া পাড়ি দেওয়া যায় না। তবে শেষ পর্যন্ত মায়ের লাশের কাছে পৌঁছাতে দুই মেয়ের ভিসা পাসপোর্টের দরকার পড়েনি। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মানবিক উদ্যোগে সীমান্তের শূন্যরেখায় শেষবারের মতো মায়ের মুখ দেখার সুযোগ মেলে তাদের। গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে। উপজেলার জগন্নাথপুর সীমান্তচৌকির বিপরীতে ভারতের নদীয়া জেলার চাপড়া থানার গোংরা এলাকায় লোজিনা বেগমের (৮০) লাশ দেখার জন্য এই সুযোগ করে দেওয়া হয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) এমন উদ্যোগে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দুপুরে বিজিবির চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়নের (৬ বিজিবি) পরিচালক, অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হাসান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দামুড়হুদার জগন্নাথপুর সীমান্তচৌকির (বিওপি) দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্তের প্রধান খুঁটি ৯৬/৮-এসের বিপরীতে ১৬১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের গোংরা বিএসএফ ক্যাম্পের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা। সেখানে নদীয়া জেলার চাপড়া থানার গোংরা গ্রামে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিক ফকির চানের স্ত্রী লোজিনা বেগম শারীরিক অসুস্থতার কারণে গতকাল সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে মৃত্যুবরণ করেন। বৈবাহিক সূত্রে বাংলাদেশের মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার জয়পুর গ্রামে বসবাস করেন লোজিনা বেগমের দুই মেয়ে বরকতি বেগম (৪৫) ও কুলসুম বেগম (৪০)। মায়ের মৃত্যুর খবরে দিশাহারা হয়ে পড়েন তারা। বিজিবি আরও জানায়, ভারতীয় ভূখ-ে মৃত্যুবরণকারী মাকে শেষবারের মতো দেখতে দুই মেয়েসহ নিকটাত্মীয়রা বিজিবির জগন্নাথপুর সীমান্তচৌকির কমান্ডার নায়েক সুবেদার মো. আবুল হাসানকে অনুরোধ করেন। এমন অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বিজিবি ও বিএসএফের সমন্বয়ে মানবতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সীমান্তের প্রধান খুঁটি ৯৬/৮–এসের কাছে শূন্যরেখায় আজ সকাল ৯টা ১০ মিনিট থেকে ৯টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে লাশ দেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়। মারা যাওয়া নারীর দুই মেয়েসহ দুই দেশের নাগরিক ও নিকটাত্মীয়দের উপস্থিতিতে সেখানে বেদনাবিধুর পরিবেশ তৈরি হয়। লাশ দেখানোর সময় সেখানে বিজিবির পক্ষে জগন্নাথপুর সীমান্তচৌকির কমান্ডার মো. আবুল হাসানসহ সঙ্গীয় সশস্ত্র টহল দল ও ১৬১ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন গোংরা বিএসএফ ক্যাম্প কমান্ডার উপপরিদর্শক (এসআই) প্রদীপ নারায়ণ ও সঙ্গীয় সশস্ত্র দল উপস্থিত ছিলো। বিজিবি জানায়, জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক লোজিনা বেগম স্বামীর সঙ্গে ভারতে বসবাস করে আসছিলেন। চার ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে বিবাহসূত্রে দুই মেয়ে বরকতি বেগম ও কুলসুম বেগম বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়নের (৬ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হাসান বলেন, ‘সীমান্তে শান্তি, সম্প্রীতি ও উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সুসম্পর্ক উন্নয়নের অগ্রযাত্রার অংশ হিসেবে এমন মানবতামূলক কার্যক্রম উভয় দেশের সীমান্তে বসবাসরত জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যতে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। এ ছাড়া উভয় সীমান্তে ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আন্তরাষ্ট্রীয় সীমান্ত অপরাধ হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়।’